এএফএম মমতাজুর রহমান আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি :১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যে ছাত্ররা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল তাদের শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয় শহীদ মিনার। তাদের শ্রদ্ধা জানাতে লেখা হয় গান, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি”। সেই ছাত্রদেরই বিদ্যাপীট দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো বগুড়ার আদমদীঘিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও বে-সরকারীভাবে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। কিন্তু বান্তবতা হলো সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও আদমদীঘি উপজেলায় বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই। আদমদীঘি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অত্র উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে মাত্র ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ১০টি শহীদ মিনার আছে বলে জানা গেছে। আদমদীঘি উপজেলায় কোন মাদ্রাসাতেই শহীদ মিনার নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সই করা ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী এক দাপ্তরিক আদেশে বলা হয়েছে, দেশের যেসব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেগুলিতে অতি দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলিতে শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে বসে আছে। বেশির ভাগ শহীদ মিনার অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে। অনেক শহীদ মিনারে লতা, গাছ জন্ম নিয়েছে। কোনো শহীদ মিনারে নিরাপত্তা বেষ্টনি নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল হামিদ, আদমদীঘি রহিম উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, আদমদীঘি কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিষ) এর সাধারন সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবীন জানান, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য শহীদ মিনার বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। একুশের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। স্থানীয় ভাবেই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তাঁরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবনী রায় বলেন, আমি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অনুরোধ করবো যাঁরা শহীদ মিনার তৈরি করেননি, তাঁরা অচিরেই এটি তৈরি করবেন।
এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা আ”লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যন আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম খান বাজু জানান, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। শহীদ মিনার নির্মাণ ব্যাপারে কোন বরাদ্দ নেই, তবে এবারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান বিষয়ে বরাদ্দ রাখবো। আশা করছি কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার হবে।