মুক্তিনিউজ২৪.কম ডেস্কঃ বোরখা পরা এক ছাত্রীর দিকে এগিয়ে আসছে একদল যুবক। দিচ্ছে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। তাতে পিছু না হটে পালটা এগিয়ে আসেন ওই ছাত্রী। দিতে থাকেন ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান। ভারতের কর্নাটকের মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে তোলা বলে দাবি করা এমনই একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ওই ছাত্রী নিজের স্কুটার পার্কিংয়ে রেখে কলেজের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিয়েছেন। সেই সময় তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে একদল যুবক। যারা গেরুয়া স্কার্ফ বা চাদর পরে ছিলো। সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকে তারা। তাতে পিছু হটে যাননি ওই ছাত্রী। বরং হেঁটে নিজের গন্তব্যের দিকে যেতে থাকেন। পিছু নেয় গেরুয়া চাদর পরা ওই যুবকরা। এমন পরিস্থিতিতে যুবকদের উদ্দেশ্য পালটা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিতে থাকেন ওই ছাত্রী।
জানা যাচ্ছে, প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের ওই ছাত্রীর নাম মুসকান। এই ঘটনা সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। কোন সাহসে অত মানুষ তাকে ঘিরে ফেলা সত্ত্বেও গুটিয়ে না গিয়ে পাল্টা স্লোগান দিলেন, জানালেন সেই রহস্যও।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে মুসকান বলেন, ‘আমি যখন কলেজে ঢুকছিলাম, তখন বাধা দেওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, আমি কেন বোরখা পরে এসেছি? কিন্তু আমি এ সব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই’। সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মুসকান দাবি করেন, ‘আমাকে দেখেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। আমিও পাল্টা ‘আল্লা হু আকবর’ স্লোগান দিতে থাকি’।
তার দাবি, উপস্থিত গেরুয়া চাদর পরিহিতদের কয়েক জনকে তিনি চিনতে পেরেছিলেন। কারণ তারাও মুসকানের সহপাঠী। তবে বেশির ভাগই বহিরাগত। মুসকান জানিয়েছেন, পড়াশোনা করাই তার অগ্রাধিকার। তার কথায়, ‘ওরা আমাদের পড়াশোনা করার অধিকারটাই ছিনিয়ে নিতে চায়, এক টুকরো কাপড়ের জন্য!’
স্কুল-কলেজে হিজাব পরে আসা যাবে না, এই দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে পথে নেমেছে কর্নাটকের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে তা ক্রমশ হিংসাত্মক আকার নিচ্ছে। তেমনই ঘটনা ঘটেছিল মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে। সেখানে হিজাব পরিহিত মুসকানকে ঘিরে ধরে এক দল মানুষের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পাল্টা মুসকানও ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেন। সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে।
মুসকান বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে এটা শুরু হয়েছে। আমি বরাবরই বোরখা আর হিজাব পরতে অভ্যস্ত। ক্লাসে বোরখা খুলে হিজাব পরে নিই। হিজাব এখন যেন আমার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কলেজের প্রিন্সিপালও কোনও দিন কিছু বলেননি। বহিরাগতরা এটা শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রিন্সিপাল আমাদের বোরখা আনতে মানা করেছেন। কিন্তু হিজাবের দাবিতে আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে’।
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের বাণিজ্য শাখার ওই ছাত্রী বলেছেন, ‘আমার হিন্দু বন্ধুরাও আমার সঙ্গে আছে। আজ সকাল থেকে একের পর এক ফোন পাচ্ছি। আমি আশ্বস্ত’।
সূত্র:দেশ রূপান্তর