মুক্তিনিউজ২৪.কম ডেস্কঃ মহামারি করোনাকালে বেশ কয়েকজন বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাসেম, আবদুল মোনেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মোনেম ও সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার।শিল্প গ্রুপগুলোর প্রতিষ্ঠাতাদের মৃত্যুর পর তাদের হাতে গড়া বিশাল শিল্প সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেন তাদের সহধর্মিণী ও মেয়েরা।
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ১৫ জুন। ১৩ জুলাই ৭৪ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট তার স্ত্রী সালমা ইসলাম যমুনা গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এই গ্রুপের ৪২টি প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন তিনি। বর্তমানে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল, রাসায়নিক, চামড়া, ইলেকট্রনিকস, বেভারেজ, টয়লেট্রিজ, নির্মাণ ও আবাসন খাতে ছড়িয়ে আছে এ গ্রুপের ব্যবসা।
দেশের আরেক বড় শিল্প গ্রুপ পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএ হাসেম করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সুলতানা হাসেম পারটেক্স স্টার গ্রুপের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন। কোম্পনিটির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই গ্রুপের অধীন ২৬টি কোম্পানি তিনি পরিচালনা করছেন। পার্টিকেল বোর্ড, দরজা, ফার্নিচার ও অ্যাগ্রোসহ বিভিন্ন খাতে কোম্পানিটির ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীনে মারা যান আবদুল মোনেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মোনেম।জানা গেছে, তার মৃত্যুর পর ছেলেদের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা ও হিস্যা নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই সমস্যার সমাধানে ব্যবসার হাল ধরেন সারাজীবন অন্দরমহলে থাকা তাদের মা মেহেরুন্নেসা। স্বামী জীবিত থাকাকালে কখনোই সম্মুখভাগে এসে ব্যবসার নেতৃত্ব নিতে দেখা যায়নি তাকে। নির্মাণ ও খাদ্য খাতে কোম্পানিটির ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।
২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুবাইয়ে চিকিৎসাধীনে মারা যান সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার। তার মৃত্যুর পর এই গ্রুপের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। ব্যাংক, এভিয়েশন, তৈরি পোশাক, মেডিকেল কলেজসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে গ্রুপটির বিনিয়োগ।
২০২০ সালের ১ জুলাই ফুসফুসের প্রদাহজনিত কারণে মারা যান ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমান। তার মৃত্যুর পর ট্রান্সকম গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হন শাহনাজ রহমান। তিনি গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত লতিফুর রহমানের স্ত্রী। তিনি ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক হিসেবে দীর্ঘ বছর থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন রহমান ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব পালন করছেন। ওষুধ, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য ও পানীয়, চা, ভোগ্যপণ্য, মিডিয়াসহ ৯টি খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। ১৮ হাজারের বেশি মানুষ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।এদিকে মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ খান মুন্নু মারা যান ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। মৃত্যুর পর গ্রুপটির চেয়ারম্যান হিসেবে হাল ধরেন তার বড় মেয়ে আফরোজা খান রিতা। মুন্নু গ্রুপের অধীন সিরামিক টেবিলওয়্যার, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টশিল্পের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপটি পরিচালনা করছেন আফরোজা খান রিতা।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনে মারা যান মোহাম্মদী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক। তিনি জীবিত থাকাকালে অংশীদার হিসেবে তার স্ত্রী ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন না। স্বামীর অসুস্থতায় ধীরে ধীরে ব্যবসার কাজে যুক্ত হন রুবানা হক। এখন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২১টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল