মুক্তিনিউজ২৪.কম ডেস্কঃ ২৩ এপ্রিল বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা গেছে বিকেল ৪টায় সকলকে ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন সকালে কাজে গিয়ে বিল্ডিংয়ের ফাটলের কারণে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করলে কর্তৃপক্ষ নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করে। কাজে যোগ না দিলে বেতন-ভাতাসহ সকল ধরনের কাজের টাকা বন্ধ করে চাকরি থেকে বের করে দেবে। তাই টাকার কথা চিন্তা করে কাজে যোগ দিই।সকাল ৯টায় মা নাশতা দিতে চাইলে আমি মাকে বলি- একটু পরেই খাব। এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মায়ের হাতে আনা নাশতা তো দুরের কথা ৩ দিন কোনো খাবার জোটেনি। টানা ৩ দিন ভাঙা বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলাম। পরে উদ্ধারকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যায় ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। আজকের এই দিনে ঢাকার সাভারে অবস্থা রানা প্লাজার ভবনটি ধসে পড়ে ১ হাজার ১৩৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আহত হন বহু মানুষ। দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হন বহু। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল সেদিন। ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের রেশ রয়ে গেছে আজও। আহতদের অনেকে এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। এরই মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন পথ খুঁজে নিয়েছেন তারা; এখনো অনেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
২০১৩ সালে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কথা মনে করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলেন ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো রেবেকা খাতুন। তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী।তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন জ্ঞান ফিরলে আমি জানতে পারি, আমার দুটি পায়ের উরুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে তার দু’পায়ে আটবার অস্ত্রোপচার কারা হয়েছে। দীর্ঘ ১ বছর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরি। শুরু হয় আরেক জীবন। এরই মধ্যে তার পঙ্গু জীবনে আসে প্রথম সন্তান সিদরাতুল মুনতাহা (৭) এবং দ্বিতীয় সন্তান মাদানি আন নূর (৩)।তিনি আরো বলেন, সন্তানেরা অন্য বাচ্চাদের মতো আমার কোলে উঠতে চায়; কিন্তু আমি এমনি এক অভাগা মা! পারি না সন্তানদের আদর করে কোলে নিতে, না পারি স্বামী-সন্তানের প্রয়োজনে কোনো কাজে আসতে। রানা প্লাজার কথা হয়তো এখন অনেকেই ভুলে যেতে বসেছে। কিন্তু সেদিনের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা আজো আমি ভুলতে পারিনি। আর কখনো পারবো না, এখনো সেদিনের কথা মনে এলে অতঙ্কে গা শিউরে ওঠে। এই দুর্ঘটনায় আমার শরীরের অপরিহার্য অংশ দুটি পা কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে আমার মা, ফুফু ও দাদির জীবন।
রেবেকা খাতুন বলেন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে যা পেয়েছি তা দিয়েই সংসার চলছে। স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে সহযোগিতা করার কারণে বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থাকতে হয়। সে কারণে ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না। রেবেকা খাতুন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে বেসরকারি কিছু সংস্থাও তাঁদের কিছু সহায়তা প্রদান করে। একটি বেসরকারি সংস্থা তার দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং একটি বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু ওই পা দিয়ে একা একা চলাচল করা সম্ভব না। কিংবা কোথাও গেলে ওই পা লাগিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করাও কঠিন। স্বামী ছাড়া তেমন চলাফেরা বা কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। আক্ষেপ করে রেবেকা বলেন, একজন কর্মক্ষম মানুষ এভাবে চলতে পারে না। পা হারিয়ে আজ কর্মহীন হয়ে সারা দিন বাড়িতে বসে কাটাতে হয়।রেবেকার স্বামী মো. মোন্তাফিজুর রহমান বলেন, সেই সময় চিকিৎসাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য যেখানে ১৫ লাখ টাকা পাওয়া কথা ছিল, সেখানে পেয়েছি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বাকি ৫ লাখ টাকা পাইনি।ফুলবাড়ী উপজেলার কাজিহাল ডাঙ্গা গ্রামের মো. আতাউর রহমানের স্ত্রী ও পৌর শহরের পশ্চিম গৌরীপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের কন্যা গুলশান আক্তার শাবানাও প্রাণ হারায় সেদিনের দুর্ঘটনায়। তাঁর লাশ খুঁজে পায়নি পরিবার। নিহত শাবানার স্বামী মো. আতাউর রহমান ও ছোট ভাই নাদিম হোসেন জানায়, গুলশান আক্তার শাবানা সে সময় সেখানেই কাজ করত, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে সেখানে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর লাশ পাইনি। তবে নিখোঁজের তালিকায় তাঁর নাম থাকায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১৩ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন। তাঁর একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। তারা বাবার কাছে থাকে।