মুক্তিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: ভারী বর্ষণ আর উজানে পানিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার বহু বসতবাড়ি। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে বন্যাদুর্গত মানুষ। এদের মধ্যেই একজন আলেখা বেগম (৩৫)। গত শনিবার (১৯ জুন) জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন প্রসূতি পরিবারের অন্য সদস্যরাও। বুধবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে আলেখা বেগমের কোলজুড়ে ফুটফুটে এক নবজাতক শিশুসন্তানের জন্ম হয়েছে। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ‘প্লাবন’। আলেখাদের বাড়ি জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তার স্বামী সোহেল মিয়া ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তাদের আরও এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে।
আলেখার স্বামী সোহেল মিয়া বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাত পৌঁনে ২টার দিকে তার স্ত্রী প্রথমবার প্রসবব্যথা অনুভব করেন। পরে জুড়ী থানা-পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত তাকে পুলিশের ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানি, নার্স না থাকার কথা বলে রোগীকে পাশের উপজেলা কুলাউড়ায় অথবা বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার দায়িত্বরত এক চিকিৎসক। কিন্তু তৎক্ষণিক কুলাউড়ায় অথবা বড়লেখায় যাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ বিভিন্ন এলাকার সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
তিনি বলেন, এছাড়া গভীর রাত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করা যায়নি। তেল সঙ্কটে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন। নানা দুশ্চিন্তায় সেখানেই রাত কাটে তাদের। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যান। সোহেল মিয়া বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর ছালেহা বেগম নামের তাদের পরিচিত এক ধাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। তার সহযোগিতায় আলেখার সন্তান জন্ম হয়। তিনি বলেন, দুঃসময়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হলে এর চেয়ে দুঃখ আর কি আছে। জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিতাংশু শেখার দাস বলেন, নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে প্লাবন। তারা সুস্থ আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নবজাতককে কোলে নিয়ে বসে আছেন আলেখা। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া বানভাসি বিভিন্ন বয়সী মানুষ নবজাতককে দেখতে ভিড় করেছে। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রসূতি ও নবজাতককে দেখতে যান। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ বুধবার বিকাল ৫টার দিকে ফোনে বলেন, নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে প্লাবন। নবজাতক ও প্রসূতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা উভয়ই সুস্থ আছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রী নবজাতকের খোঁজ খবর নিয়েছেন। আমরা প্রতিদিন খোঁজ খবর রাখছি। তিনি আরও বলেন, প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেনো গাফলাতি হলো এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুড়ী জায়ফর নগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজা বলেন, শুনেছি আশ্রয়কেন্দ্রে নবজাতকের জন্ম হয়েছে। দেখতে যাবো। এখনও পানি কমছে না।