মুক্তিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: ছানোয়ার হোসেন।পাঁচ বছর আগে চাকরি ছেড়ে শখের বশে শুরু করেন কফি চাষ। টাঙ্গাইল জেলার মধুুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের কফি বাগান।
ছানোয়ার হোসেনের দাবি মধুপুরে তিনিই প্রথম কফি চাষ শুরু করেন। ছানোয়ার হোসেন একজন বৃক্ষপ্রেমী এবং কৃষি উদ্যোক্তা। প্রায় ২ বিঘা জমিতে কফি বাগানে ৫-৬’শ পরিপক্ক গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি গাছে থরে থরে ঝুলছে ফল। দেখে মনে হয় যেন নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছেন কফির ছড়াগুলো।
তিনি কফি বাগান ছাড়াও কলা, পেয়ারা, মাল্টা এবং ফিলিপাইন থেকে এমডি-২ জাতের আনারসের চারা এনে চাষ করছেন। সদালাপী শিক্ষিত ছানোয়ারের কৃষিতে সফলতায় স্থানীয় অনেকেই কৃষির প্রতি ঝুঁকছেন।
ছানোয়ার হোসেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের মহিষমারা কলেজ পাড়া গ্রামের মো. জামাল হোসেনের ছেলে। জামাল হোসেনের ৪ সন্তানের মধ্যে তিনিই একমাত্র ছেলে সন্তান।
পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৩ সনে ছানোয়ার সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রেংগা হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কৃষির প্রতি তার একাগ্রতায় তিনি বেশি দিন চাকরি করতে পারেননি।
চাকরি ছেড়ে তিনি গ্রামে এসে কৃষি কর্মে ঝুঁকে পড়েন। কৃষিতে সফলতা পেয়ে ওই উপার্জিত অর্থে তিনি নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন সুনামগঞ্জ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিষমারা কলেজ। এলাকায় তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত।
সরেজমিনে ছানোয়ার হোসেনের কফি বাগানে গিয়ে দেখা যায় তিনি নিজেই বাগানের পরিচর্যা করছেন। কফি চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারু চারার মত। প্রতিটি গাছে লতিয়ে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ কফির ফল।
তিনি জানান, প্রথমে তিনি কফির ২০০ চারা রাঙামটি জেলার রায়খালী থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। সেখান থেকে তার আজকের এই বাগান।
তিনি বলেন, কফি ফল পাকলে সেগুলো শুকিয়ে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে তবেই তা পান করার উপযোগী হয়। তবে তিনি শুকনো কফি দানা ও প্রক্রিয়াজাতকৃত কফি দুই ভাবেই বিক্রি করে থাকেন বলে জানান।
কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চাইলে শুকনো দানা থেকে চারা তৈরি করে বিক্রি করার আশাও পোষণ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ক গাছে ফুল আসে। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটিতে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুটিগুলো পরিপক্কতা লাভ করে।পরে এই গুটিগুলো রোদে শুকিয়ে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করেন।
তিনি জানান, তার প্রক্রিয়াজাতকৃত কফি বাজারের প্যাকেটজাত কফির চেয়ে স্বাদে গন্ধে অনেকটাই আলাদা। কারণ তিনি প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করে এই কফি উৎপাদন করেন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, ছানোয়ার হোসেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ২’শত কফির চারা নিয়ে চাষ শুরু করলেও পরবর্তীতে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তার ওই কফি বাগান সম্প্রসারিত করেছেন। কফি বাগান ছাড়াও তার আনারস, মাল্টা, পেয়ারা, কলা বাগান রয়েছে।
তিনি সবসময় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে জৈব সার ব্যবহার করে কফিসহ অন্যান্য ফসল চাষ করেন। এতে তিনি ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।