প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২২, ২০২৪, ৫:৪৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ৩১, ২০২৩, ৮:১২ অপরাহ্ণ
মোঃলাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।।
২০১৫ সালে ৩১ জুলাই মধ্য রাতে বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের হাজার হাজার মানুষ। সেদিন থেকে বদলে যেতে থাকে তাদের জীবনযাত্রার মান।
দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে অবহেলিত এ মানুষগুলো গত ৮ বছরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব নাগরিক সেবা পেয়ে আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছে। পারিবার গুলোতে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। মুল ভূখণ্ডের সাথে উন্নয়নে পাল্লা দিয়ে বদলে গেছে সেখানকার নাগরিকদের জীবনযাত্রা।
ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে সরকারি সব ধরনের উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করেছে নতুন ভূখণ্ডের মানুষ গুলো। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বিনিময় ঘটে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ভারতের মূল ভূখণ্ডের যুক্ত হয় এই দিনে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলের হাজার হাজার মানুষের ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের।
সাবেক ছিটমহলের প্রতিটি গ্রামে এখন প্রশস্ত পাকা- রাস্তা। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা। মসজিদ-মন্দির, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের নানারকম কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে নতুন এক উন্নয়েনের জনপদ। বিলুপ্ত ছিটমহল গুলোর চিত্র এখন চোখে পড়ার মতো, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক, কমিউনিটি সেন্টার, পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, রাস্তা-ঘাট পাকাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন হয়েছে।
গত ৮ বছরের মধ্যেই যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সামাজিক নিরাপত্তার মতো নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সবকিছুই পূরণ। দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য সব সাবেক ছিটমহলের মতো উন্নয়ন ঘটেছে লালমনিরহাটের ৬১ ছিটমহলেও।
এসব মানুষদের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ছিটমহলটির বাসিন্দারা পাচ্ছেন আধুনিক সব সুবিধা।
পাটগ্রাম উপজেলার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ালেখা করছে। সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা আমরা পাচ্ছি। তবে জমিজমা নিয়ে একটু জটিলতা আছে আশা করি তা দ্রুত সমাধান হবে।
হাতীবান্ধার উত্তর গোতামারী ছিটমহলের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম ও আব্দুস ছামাদ জানান, যখন ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলাম, তখন যেন বন্দী জীবন যাপন করতে হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম। এখন আমরা স্বাধীন এটাই বড় পাওয়া আমাদের। দীর্ঘ ৬৮ বছরের সংগ্রাম পার করে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আমরা পেয়েছি নতুন জীবন।
হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা জানান, আমার ইউনিয়নে একটি ছিটমহল ছিলো। গত ৮ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমার ইউনিয়নের সাবেক ছিটমহলে এখন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক, কমিউনিটি সেন্টার, ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, রাস্তা-ঘাট পাকাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাটের ছিটমহলগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, কমিউনিটি সেন্টার, পাকা সড়ক, মসজিদ-মন্দির, ব্রিজ-কালভার্ট, ইউড্রেন, টিউবওয়েল, কাঁচাপাকা ল্যাট্রিন। তিনি আরও জানান, এছাড়া হতদরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতের সংযোগ, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে সাবেক ছিটমহলবাসীরা। তারা এখন প্রয়োগ করতে পারছেন তাদের ভোটাধিকার, তাদের সন্তানরা এখন বাড়ির পাশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় লেখপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। কৃষকদের প্রণোদনাসহ আধুনিক চাষাবাদের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন জানান, সাবেক ছিটমহল গুলোর কোনো বিষয় নিয়ে যখনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছি। কোনো কথা নেই সাথে সাথে তিনি করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সাবেক ছিটমহল গুলোর উন্নয়নের বিষয়ে প্রচন্ড আন্তরিক। দীর্ঘ ৮ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে সাবেক ছিটমহল গুলোতে। তাদের আর দুঃখ ও দুর্দশা নেই।