কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ১৩.৮২০২৩
কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলে আবারও সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি তিন দিন ধরে বেড়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও চরাঞ্চলের নিম্নভূমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রোপা আমন ২৮৫ হেক্টর ও ৫০ হেক্টর সবজিখেত বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের কোনো বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই।
আজ রোববার(১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের রসুলপুর চরের বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ থেকে দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করেছে। এতে রসুলপুর চর, প্রথম আলো চর, রাউলিয়া চর এলাকায় ১০ হেক্টর আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে ডুবে যাওয়া ধান পলির নিচে তলিয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়ে বন্যা হলে কৃষকের ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
গত মাসে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিচু ভূমিতে কিছু আমন ধানের বীজ ছিটিয়েছিলেন যাত্রাপুর ইউনিয়নের অষ্টআশির চরের কৃষক আজিজুল হক। তিনি বলেন, কয়েক দিন থেকে ভারী বৃষ্টিতে তাঁর সব সব ধানখেত ডুবে গেছে। এবার বড় বন্যা দেখা না দিলেও দেড় মাস ধরে বন্যার পানিতে নিচু জমি ডুবে আছে। এ কারণে ডাল ও বাদাম চাষ পিছিয়ে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, জুলাই মাসে কুড়িগ্রামে সর্বশেষ বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কৃষকেরা রোপা আমন চাষ শুরু করেন। কিন্তু কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২৮৫ হেক্টর রোপা আমন ও ৫০ হেক্টর সবজিখেত বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলায় ৩৮৭ মে.টন চাল, ১০ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ২ লাখ ও গো খাদ্য ক্রয় বাবদ পাঁচ লাখ টাকা নগদ মজুত আছে। বন্যার্তদের জন্য ১৮টি স্থায়ী ও ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র, চারটি রেসকিউ বোট ও ২৭৫টি স্থানীয় নৌকা, স্কাউট, রোভার স্কাউট এবং রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও বন্যার সময় নদী ভাঙন রোধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।