কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় বিনা নোটিশে ৪র্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পরও গত দু’মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি এক কর্মচারী। এ ছাড়াও মামলা প্রত্যাহার না করলে চাকুরীচ্যুতির হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন ওই কর্মচারী। প্রধান শিক্ষকের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অমানিবক আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য,শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিভাবকরা।
জানা যায়,২০০৯ সালের ১৩জুন রৌমারী উপজেলার যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন)’ পদে নিয়োগ পান বাবলু মিয়া। পান উচ্চতর গ্রেডও। ২০১৪সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মাসে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ‘পিয়ন’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে ‘অফিস সহায়ক’ পদটি না দিয়ে ওই পদে পছন্দের লোক নিতে একে একে দু’বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে গত ১৭এপ্রিল রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগি ওই কর্মচারী। এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ্য হন ভুক্তভোগি।। গত ২৪জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারী সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন পিয়ন বাবলু মিয়া। পরে ২৮ আগষ্ট উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আদালত অফিস সহায়ক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মচারী বাবলু মিয়ার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক। কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত হলেও প্রধান শিক্ষক তার ক্ষমতা বলে
হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেন না ভুক্তভোগীকে। বিদ্যালয় প্রধানের এমন অমানবিক আচরণের কারণে বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় ৫সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি। পিয়ন বাবলু মিয়া বলেন, নিয়মিত কর্মস্থলে হয়ে দায়িত্ব পালন করলেও গত দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। বেতন বন্ধের আগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে কোনো প্রকার নোটিশও দেননি। এখন বেতন না পেয়ে খুব কষ্টে আছি। ঘরে খাবার নেই। অসুস্থ্য স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে পারছি না। সন্তানদের লেখাপড়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে এর সুবিচার চান তিনি। এছাড়াও তিনি আরও বলেন,৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে নিয়োগ পেয়ে২০০৯সাল থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি মামলা করলে আদালত তা আমলে নেন এবং ওই নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এতে প্রধান শিক্ষক আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে যা তা করছেন। বেতন-ভাতা বন্ধসহ দিচ্ছেন চাকুরী খাওয়ার হুমকিও।
প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিদ্যালয়ে কখন কোন বিজ্ঞপ্তি হয় তা জানতে পারি না। পিয়ন বাবলু মিয়ার সাথে যা করা হচ্ছে তা খুবই অমানবিক। সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, অফিস সহায়ক পদে লোক নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেই মনগড়া নিয়ম করছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে অফিস সহায়ক পদ না দিয়ে উল্টো তাঁকে চাকুরীচ্যুতির মিশনে নেমেছেন প্রধান শিক্ষক এবং তার একটি সিন্ডিকেট চক্র।
ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) বাবলু মিয়ার সাথে প্রধান শিক্ষক যা করছেন তা অত্যন্ত অমানবিক ও দু:খজনক। তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির গত ৩টি মিটিংসহ সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছি।এতে করে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘বাবলুকে আমিই নিয়োগ দিয়েছি। ওর তো পদই নেই। ওকে যখন যে পদ দিবো সে পদেই চাকুরী করতে হবে।’
নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পরও বিনা নোটিশে বেতন-ভাতা বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁকে নিরাপত্তাকর্মী (নব সৃষ্ট পদ) দেওয়া হয়েছে। এ পদে স্বাক্ষর না করায় তাঁর বেতন–ভাতা বন্ধ রয়েছে।
নিয়োগকৃত পদ পিয়ন পদের স্থলে নব সৃষ্ট পদ ‘নিরাপত্তাকর্মী’ পদবীতে স্বাক্ষর করার বিধান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিস সহায়ক পদটি বাবলু মিয়াকে দিলে তাঁর বিল হবে না। এ জন্য এ পদে নিয়োগের মাধ্যমে অন্যজনকে নিতে হবে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।#