মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মেরাজের রাতে আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। এরপর পর্যাক্রমে তা পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসা হয়।
পঞ্চাশ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের ওপর প্রত্যেক দিন ও রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। আমি মুসা আলাইহিস সালামের কাছে আসি। তিনি বলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বলেন, আপনি রবের কাছে গিয়ে আরও সহজ করার আবেদন করুন। আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। আর আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের সম্পর্কে জানি। বীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আমি রবের কাছে গিয়ে বললাম, হে আমার রব, আমার উম্মতের জন্য সহজ করুন। তিনি পাঁচ নামাজ কমালেন। আমি মুসা আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে বললাম, তিনি পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়েছেন। মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। আপনার রবের কাছে যান এবং সহজ করার আবেদন করুন। এভাবে আমি মহান রব ও মুসা আলাইহিস সালামের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, প্রতিদিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। প্রত্যেক নামাজের বিনিময়ে ১০ নামাজের সওয়াব হবে। এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হবে। আর যে কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করবে এবং তা করল না তার জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে। আর তা করলে দশ সওয়াব লেখা হবে। আর যে কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা করল না, তার ক্ষেত্রে কিছুই লেখা হয় না। আর তা করলে একটি গুনাহ লেখা হয়।’ এরপর আমি অবতরণ করে মুসা আলাইহিস সালামের কাছে আসি। এবারও তাকে জানালে তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে সহজের আবেদন করুন। আমি বললাম, আমার রবের কাছে অনেকবার গিয়েছি, এখন আবার যেতে লজ্জাবোধ হচ্ছে।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৬২)
গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ আদায়...
উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য মেরাজের রাতের বিশেষ প্রাপ্তি হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তাই সবার উচিত ঠিকমতো মনোযোগ ও গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। কারণ ঠিকমতো প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে ৫০ ওয়াক্তে সওয়াব হবে অন্যথায় এই ৫০ ওয়াক্ত না পড়ার হিসাব দিতে হবে আল্লাহ তায়ালার কাছে।
জাহান্নামীদের শাস্তি...
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে— ‘কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদের খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে (কেয়ামত) অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত, ৩৮-৪৭)
ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ
ইচ্ছা করে কখনো নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না এবং নামাজ আদায়ের প্রতি অবহেলা দেখানো যাবে না। কারণ, ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দেওয়া কবিরা গুনাহ। এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা কুফরীর মতো কাজ। হজরত মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।’ (মুসনাদ আহমাদ ৫/২৩৮) পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বেনামাজিদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘নবী ও হেদায়েতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা ‘গাই’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত, ৫৯) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরি করলো। (কাফেরের মতো কাজ করলো)।’ (মুসলিম, হাদিস, ৮২)
কাফের ও মুসলিমের মাঝে পার্থক্য
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি, ২৬২১)
কিন্তু...
হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরীর মতো কাজ। কিন্তু এর কারণে মানুষ কাফির হয় যাবে না। মূলত বিষয়টি এমন যে, নামাজ ছেড়ে দেয়া কাফেরদের মতো কাজ। কিন্তু এর কারণে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায় না। একটি হল কাফিরের মতো কাজ। অপরটি হলো কাফির হয়ে যাওয়া। দু’টি দুই জিনিস। যেমন একজনকে রান্না করতে দেখে আপনি বললেন লোকটি বাবুর্চির কাজ করল। এর মানে লোকটি বাবুর্চির মতো কাজ করেছে। কিন্তু এর কারণে ব্যক্তিটি বাবুর্চি হয়ে যায়নি। তেমনি নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরীর মতো কাজ। কিন্তু এর কারণে কেউ কাফির হয়ে যায় না।
হজরত আবু জর গিফারী রা. থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
فَقَالَ: “مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ فِي الرَّابِعَةِ: “عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ “
যে ব্যক্তি বলে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারপর সে এই অবস্থায় ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতী হবে। আমি বললাম, যদি সে জেনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যদিও সে জেনা করে বা চুরি করে। আমি আবার বললাম- যদি সে জেনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যদিও সে জেনা করে বা চুরি করে। এভাবে তিনবার বললাম, তখন চতুর্থবারের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও আবু জরের নাক কুঞ্চিত হয় তবু। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস, ২১৪৬৬) ওপরে বর্ণিত আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায় পাপ করার কারণে মানুষ গুনাহগারর হয়, কিন্তু ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না। সে তার পাপের শাস্তি ভোগ করে একদিন জান্নাতি হবেই ইনশাআল্লাহ। তবে কোনো ব্যক্তি যদি নামাজ না পড়ার পাশাপাশি এই বিশ্বাস রাখে যে, নামাজ পড়া ফরজ নয়, তাহলে সে ব্যক্তি কাফির। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved