প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৬:২০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ১৫, ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ণ
গাইবান্ধার কবি সরোজ দেব, চলছে কেমোথেরাপি
৬০ দশকে উত্তরাঞ্চলের লিটলম্যাগ আন্দোলনের পুরোধা কবি সরোজ দেব (৭৩) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সরোজ দেব ১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রখ্যাত ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ উপেন্দ্র নাথ দেব ও মাতা সান্তু দেব। সরোজ দেব ১৯৬৯ সালে গাইবান্ধা কলেজ ছাত্র সংসদের ম্যাগাজিন সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার সরোজ দেব দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও গড়েছেন একাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। মূত্রথলি থেকে টিউমার অপসারণের পর তাকে দেওয়া হচ্ছে কেমোথেরাপি। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। যে টুকু চিকিৎসা হচ্ছে তা শুভাকাঙ্ক্ষীদের টাকায়। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় বর্তমানে কবির দিন কাটছে দুঃখ-কষ্ট আর অনাহারে। রোববার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ঐশী ক্লিনিকেরর বিছানায় অসহায় কবিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কবিকে দেখতে আসেন গাইবান্ধা জেলা প্রাশাসক (ডিসি) কাজী নাহিদ রসুল। সঙ্গে ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ আল হাসানসহসহ অন্যরা। কবির চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থসহায়তা দেন ডিসি কাজী নাহিদ রসুল। সেই সঙ্গে নির্ধারিত মাসিক ১৫ হাজার টাকা সহায়তাসহ পরবর্তীতে আরও ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কবিকে গাইবান্ধা শহরের নিজ মালিকানাধীন ঐশী ক্লিনিকে ভর্তি করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব। পরে শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ২৮ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কবির মূত্রথলি থেকে টিউমার অপসারণ করা হয়। চিকিৎসাধীন কবি সরোজ দেব বর্তমানে রমেক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ জাহান আফরোজা লাকীর তত্ত্বাবধানে আছেন। রোববার তাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য রংপুর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আগামীকাল কবিকে রংপুর নেওয়া হবে। স্কুল জীবনেই সরোজ দেবের কাব্যিক প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। পরে কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। শুরু করেন ‘শব্দ’ সম্পাদনা। কলেজ জীবন থেকেই ‘শব্দ’ সম্পাদক হিসেবে নাম অর্জন করেন তিনি। একটানা ৫৬ বছর ‘শব্দ’ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও স্বজন শব্দাবলি, প্রাণেশ্বরীর মাচান, বজ্রে বাজে বেণু, লাল গোলাপের জন্য, শতদল, মোহনা, সংশপ্তক, শতাব্দী, নান্দনিক ইত্যাদি বিভিন্ন নামে দেড় শতাধিক সাহিত্য পত্রিকা বা লিটলম্যাগ বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনা করেছেন। ষাট দশক থেকে তার পদচারণায় মুখরিত ছিল গাইবান্ধার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সূর্যকণা’ তার হাতেই গড়া। সরোজ দেব স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখা শুরু করলেও তার কবিতার বই বেরিয়েছে অনেক পরে। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে, ধবল মেঘের দিনগুলো (২০০৬), অনন্ত রোদ্দুরে এসো (২০০৯), স্বরচিত সুখের সৎকার (২০১০), স্বপ্ন শুয়েছিল কুয়াশায় (২০১১) ও সময় আমাকে হত্যার কথা বলে গ্যাছে (২০১৩)। তার লেখার তুলনায় বইয়ের সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া তিনি অনেকগুলো গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন। সেগুলো হলো- রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), শরৎচন্দ্রের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), কবিতার যৌথ খামার (২০০৯), নির্বাচিত কবিতা (২০১২) ও ছোটদের শরৎচন্দ্র (২০১২)। এ বিষয়ে গাইবান্ধার ডিসি কাজী নাহিদ রসুল বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবি সরোজ দেবেকে সম্ভাব্য সব ধারণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তার চিকিৎসার খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved