প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৪, ২০২৪, ২:৫২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ১৫, ২০২৪, ৭:২২ অপরাহ্ণ
লালমনিরহাটে ঘন-কুয়াশায় ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি অতিষ্ঠ জনজীবন
মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।।
লালমনিরহাটে টানা সপ্তাহ জুড়ে সূর্যের দেখা নেই হিমালয়ের পাদদেশের লালমনিরহাট জেলায়। ঘন- কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। জীব বৈচিত্র্যের সঙ্গে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জেলার কৃষকদের সবজি ও বোরো বীজতলা।
ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলার কৃষি অর্থনীতি।
জানা গেছে, হিমালয়ের পাদদেশের জনপদ এ জেলায় সূর্যের দেখা নেই প্রায় সপ্তাহজুড়ে। দিনভর তাপহীন হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতিতে বিকেলেই নামে ঘন কুয়াশা।
বৃষ্টির মতো বয়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। বৈরী এ আবহাওয়ায় প্রায় বিপর্যস্ত জনজীবন। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে আসছে না মানুষ। সন্ধ্যার পরেই উপজেলা প্রশাসনও গাড়িতে কম্বল নিয়ে ভ্রাম্যমাণ টিম হিসেবে ছিন্নমূলদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে শীতবস্ত্র। তবে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। তাদের জন্য জ্যাকেট বা সোয়েটার বিতরণের দাবি করছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রকৃতিতে বয়ে চলা ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক মন্দা প্রভাব ফেলছে। তীব্র শীতে আলু, পেঁয়াজ, শিমসহ নানান জাতের সবজি ও বোরো বীজতলায় ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা কৃষকদের। পচন ধরেছে আলু, পেঁয়াজ ও রসুন ক্ষেতে। ঠান্ডায় ফ্যাকাশে হয়ে মরে যাচ্ছে বোরো বীজতলার চারা। মৌসুমের আলু ঘরে তোলা নিয়ে বড় চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ৩দিন পর পর স্প্রে করেও ক্ষেত রক্ষা করা যাচ্ছে না। মরে যাচ্ছে বোরো বীজতলা। ফলে বোরো চাষাবাদ নিয়েও চিন্তিত কৃষকরা। সব মিলে ঠান্ডায় জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে ক্ষতির মুখে কৃষিও।
লালমনিরহাটের সবজি গ্রাম খ্যাত বড় কমলাবাড়ি গ্রামের কৃষক মাসুদ মিয়া জানান, প্রায় ২৪ দোন (২৭ শতাংশে দোন) জমিতে আলুর চাষ করেছেন। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় আলু ক্ষেতে পচন রোগ এসেছে। স্প্রে করা হচ্ছে ৩দিন পর পর। তবুও রক্ষা করা যাচ্ছে না। সূর্যের দেখা মিললে কুয়াশা শুকিয়ে যেত। তখন ক্ষতিটা কম হত। বিকেল থেকে পরদিন প্রায় দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। এতে আলু ক্ষেত রক্ষা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। আলু ঘরে তুলতে আরও প্রায় এক মাস পরিচর্যা করতে হবে। গেল বছর প্রায় ১৪ লাখ টাকার আলু বিক্রি করেছি। আবহাওয়া এমন থাকলে উৎপাদন খরচ তোলা দায় হয়ে পড়বে বলে দাবি তার।
একই গ্রামের চাষি তাজউদ্দিন বলেন, ৩ দোন জমিতে আলু লাগাইছি। ঠান্ডায় পচন রোগ এসেছে। ইন্ড্রোফিল ও মাইকা স্প্রে করছি ৩দিন পর পর। তবুও পচন ছাড়ছে না। এবারে বীজের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। গত বছর ২৫ টাকা কেজি দরে বীজ ক্রয় করা হয়েছিল। সেই বীজ এ বছর ৫৫/৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে। এমন আবহাওয়ায় স্প্রে খরচ বাড়ছে। ফলে দোন প্রতি ৩৫/৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
আলু চাষি বিল্লাল বলেন, ঠান্ডায় ঘরের বাহিরে যাওয়া যায় না। আলু ক্ষেতে স্প্রে একদিন দেরি হলে পুরো ক্ষেত পচে মরে যাবে। ঋণের টাকায় ২ দোন জমিতে আলু চাষ করেছি। সেই ক্ষেত মরে গেলে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা পরিবারের খাবার যোগানো দায় হয়ে পড়বে বলে যোগ করেন তিনি।
খুনিয়াগাছের কালমাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল বলেন, ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ফ্যাকাশে হয়ে মরে যাচ্ছে। সকালে কুয়াশার পানি বিশেষ পদ্ধতিতে চারা গাছ থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তবুও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এমন আবহাওয়া থাকলে বোরো চাষাবাদে চারা গাছের সংকট দেখা দিতে পারে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, চলতি বছর লালমনিরহাট জেলায় ৬ হাজার ৪ শত ৫৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। কুয়াশার কারণে সবজিতে একটু ক্ষতি হতে পারে। তাই কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যথাসাধ্য ক্ষেতে শীতকাটা ওষুধ স্প্রে করতে। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের পরামর্শে কৃষকরা স্প্রে অব্যাহত রাখায় তেমন কোনো ক্ষতির মুখে পড়েনি কৃষি। তবে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কিছু বাড়তে পারে।
বোরো বীজতলা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে সকালে খুলে দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। সম্ভব হলে সকালে বীজতলায় পানি ছিটানো যেতে পারে যাতে কুয়াশার পানিটা চারা গাছের ডগা থেকে নিচে নেমে যায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি না হলে কৃষিতে বড় কোনো ক্ষতি হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved