(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: অতিরিক্ত টাকা ও দালাল ছাড়া মিলছে না জমির রেকর্ড, পর্চা, মৌজার নকশাসহ সেটেলমেন্ট অফিসের জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা। এমনই অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুর খানসামা উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। দালালদের সাথে ঐ অফিসের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাশ চন্দ্র রায় এসব ঘটনার সাথে জড়িত বলে সেবা নিতে এসে ক্ষোভ জানিয়ে ভোগান্তির এসব কথা বলেন সেবাগ্রহীতারা। জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, জেলা অফিসের অধীন বিভিন্ন উপজেলায় ভূমি মালিকগণকে ফি সহ পর্চার নকল প্রদান, খতিয়ান ও নকশা প্রদান এবং ফি ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারী) দিনব্যাপী খানসামা উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। সিটিজেন চার্টারের সাথে মিল নেই সেবা প্রদানে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ সংক্রান্ত সেবা ঘুষ ছাড়া মিলছে না। মিলছে না জমির পর্চা আর মৌজার নকশাও। সেবা পেতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। টাকা ছাড়া সেবা নিতেই গেলে হতে হয় হয়রানির স্বীকার। প্রতিদিনই ঘটছে এ কাজ। তবে কাজ না হওয়ার ভয়ে অনেকেই এবিষয়ে মুখ খুলছে না। প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটে বলে জানা যায়। সেই সাথে এদিন দালালদের আনাগোনা দেখা গেছে এই অফিসে। যারা সেবা নিতে আসা মানুষের কাছে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এদিন দালাল সন্দেহে অফিসের সামনে সেবাগ্রহীতাদের সাথে কথা বলা ২-১ জনের পরিচয় জানতে চাইলে সাংবাদিক বুঝতে পারে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করে তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠ পর্চা নিতে গেলে আবেদনে ২০/- টাকার কোর্ট ফি এবং ১০০/- টাকা অনুলিপি বাবদ ডিসিআর এর মাধ্যমে আদায় করে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও পর্চা প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা নেওয়ার সত্যতা মিলছে। উপজেলার আংগারপাড়া মৌজার পর্চা নিতে আসা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, পর্চা নিতে গেলে কর্মচারীরা ৫শ টাকা ছাড়া দিবে না বলে জানায়। সেটাও কয়েকদিন ঘুরেও পাইনি। সামনে সপ্তাহে আসতে বলেছে। হয়রানির স্বীকার সহজপুর মৌজার সুধীর সেন বলেন, এই অফিসের মাটিতে পা দিলেই টাকা ছাড়া কেউ ঘুরে আসতে পারে না সর্বোচ্চ দুর্নীতির জায়গা সেটেলমেন্ট অফিস। ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ১শ টাকার পর্চা ৫শ টাকা ছাড়া মিলছেই না বাহে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বলেন, সারাদিন অফিসে এসেও কাজ না হয়েও ঘুরে যেতে হচ্ছে। ভ্যান চালালেও তো কিছু টাকা উপার্জিত হইতো, এত ভোগান্তি। আংগারপাড়া মৌজার মিঠুন অধিকারী নামে এক যুবক বলেন, মাঠ পর্চায় আমাদের জমির কয়েকটা দাগ নং দেখতে চাইছি এইজন্যই আমার কাছে ৪ হাজার টাকা চাইছে। কি আর বলি? তবে এসব বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাশ চন্দ্র রায় বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি'র চেয়ে অতিরিক্ত কোন টাকা আমরা কখনও গ্রহণ করি না। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মির্জা জিকরুল হক বেগ মুঠোফোনে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি'র বেশী টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কয়েকটি উপজেলার দায়িত্বে থাকায় ঐ অফিসে আমি নিয়মিত যেতে পারি না তাই এটা সম্পর্কে ধারণা নেই। তবে আমাকেও ফোনে একজন এমন অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভারপ্রাপ্ত খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মারুফ হাসান বলেন, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হলাম। তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো: শামছুল আজম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন ঘটনা কখনোই আমরা প্রশ্রয় দেই না।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved