মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : বিশ্বের ১১টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এতদিন যে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ছাড় পেয়ে আসছিল, আগামী তিন বছরের মধ্যে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে রফতানি বাড়াতে নতুন নতুন বাজার ও উপায় খুঁজছে সরকার।
আগামী মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে জাপানের প্রভাবশালী পত্রিকা নিক্কেই এশিয়াকে বিশেষ এক সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
ওই সাক্ষাৎকারেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে বিশ্বের ১১টি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
জাপান বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী দেশ। দেশটিতে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়ন ও অংশীদারত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে মোকাবিলা করতে জাপান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যদি একবার জাতিসংঘ ঘোষিত দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে একটি ‘ভিন্ন পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হবে। কারণ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখনও উন্নত দেশগুলোতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রফতানি শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে যে শুল্কবিহীন বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে আসছিল তা হারাবে। ফলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কারণে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। তার কথায়, ‘আমরা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চাই। বর্তমানে ১১টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে।’
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমিত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। কিন্তু কোনো দেশের সঙ্গে ‘এফটিএ’ বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই। তবে কোন কোন দেশের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আলোচনা চলছে, তা জানাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন ও জাপান রয়েছে।
চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ। পোশাক খাতের বাইরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতিকে প্রতিশ্রুতিশীল খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি মৎস্য সম্পদসহ বঙ্গোপসাগরের সম্পদের কথাও তুলে ধরেছেন সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, বঙ্গোসাগরকে ব্যবহার করে কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায় তা নিয়েও আমরা ভাবছি।’
নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন মতে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। তবে শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ কূটনীতির প্রতি নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশকে কীভাবে উন্নত করা যায়, সেটাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আমাদের উন্নয়নের জন্য প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।’
বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাপান সহযোগীর ভূমিকা রেখে আসছে বলেও জোর দিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার মেয়াদকালে ৪৪০ কোটি ডলার বা ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন (জাপানি মুদ্রা) সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তী সাত বছরে জাপানি সহায়তা ঋণ আরও বেড়ে ১.৬৫ ট্রিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছেছে।
জাপানের সহায়তায় দেশে প্রথম মেট্রোরেল, প্রথম শিল্প পার্ক, শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি নতুন টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাপান অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখছে।’
নিক্কেই এশিয়ারর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ও ঋণ বেড়েছে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা সতর্ক রয়েছেন। এ জন্য মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে চীনা সহায়তা না নিয়ে জাপানি সহায়তা নিয়েছেন তিনি।
এদিকে জাপান তার নতুন অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্স (ওএসএ) প্রোগ্রামের প্রথম বছরে বাংলাদেশকে চারটি সম্ভাব্য দেশের একটি হিসেবে পরিকল্পনায় রেখেছে। এর ফলে বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে বিনামূল্যে সামরিক সরঞ্জাম পেতে যাচ্ছে।
নিক্কেই এশিয়া বলেছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। এ কারণে গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষা করতেই আমি এসেছি।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় একাধিকবার সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের নজির রয়েছে। সেনবাহিনীর সঙ্গে বর্তমান সরকারের আস্থা তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সময়ে তাদের (সেনাবাহিনীর) যে অগ্রগতি হয়েছে, তা তারা স্বীকার করে।’
সাক্ষাৎকারে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি এমন একটি বোঝা, যা আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আমরা বাইরের বিশ্ব থেকে যেসব সমর্থন পেতাম, তা আসলে কমে যাচ্ছে।’
এ সময় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved