মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : বাংলাদেশে বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোসকপি করাতে গিয়ে একজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় বেশ শোরগোল চলছে। রোগীর পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, চিকিৎসকদের ‘অবহেলা’র কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন তাদের দিক থেকে কোনও অবহেলা ছিল না কিংবা চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, রোগ নির্ণয়ের জন্য কোনো টেস্ট করাতে গেলে তাতে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে কি না? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কিছু ‘ইনভেসিভ টেস্ট’ রয়েছে। অর্থাৎ শরীরের ভেতরে কোনও যন্ত্রাংশ ঢুকিয়ে যে সব টেস্ট করা হয় সেগুলোকে ‘ইনভেসিভ টেস্ট’ বলা হয়। এসব টেস্ট করানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। যে সব ‘ইনভেসিভ টেস্ট’ কখনও কখনও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তার কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো।
এন্ডোসকপি
এন্ডোসকপি হচ্ছে একধরনের পরীক্ষা যার মাধ্যমে একজন চিকিৎসক রোগীর শরীরের ভেতরে কোনো অংশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এন্ডোসকপি শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি নমনীয় টিউবের মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়। খাদ্যনালি ও পাকস্থলীতে সমস্যা নির্ণয়ের জন্য রোগীর মুখ দিয়ে এই নল প্রবেশ করানো হয়। অনেক সময় যেসব রোগী দীর্ঘ সময় যাবত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার ভুগছেন তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের এন্ডোসকপি করানো হয়। এই পরীক্ষা করানোর সময় কিছু জটিলতা বা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করছেন। রোগীর অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না, সেটি আগে থেকে ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ‘এ টেস্ট করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবশ্যই রোগীকে পরিষ্কার করে বলতে হবে যে এর ফলে কী সমস্যা হতে পারে’, বলছিলেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব।
ব্রঙ্কোস্কোপি
এই পদ্ধতির সাহায্যে চিকিৎসকরা রোগীর শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি পাতলা টিউবের মাথায় ক্যামেরা লাগানো থাকে এবং সেই টিউবটি নাক কিংবা মুখ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে ফুসফুসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। চিকিৎসকরা বলেন এই টিউবটি খুবই নমনীয় এবং অতি সহজেই ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে। তারা এটাও বলছেন, ব্রঙ্কোস্কোপি নিরাপদ প্রক্রিয়া হলেও সেটির কিছু ঝুঁকি আছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক কাজী সাঈফুদ্দিন বেন্নুর বলেন, রোগীর যদি অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে যার কারণে তিনি হয়তো এই টেস্ট-এর ধকল নিতে পারবেন না, তাহলে এই টেস্ট প্রয়োজনীয় হলেও সেটি নিয়ে অগ্রসর হওয়া যাবে না। ‘আমি যখন পরীক্ষার জন্য নলটা প্রবেশ করাব তখন রোগীর শ্বাসনালী কম্প্রোমাইজড হবে। ওই রকম কম্প্রোমাইজড অবস্থায় তিনি ১৫ মিনিট বা আধাঘন্টা থাকতে পারবেন কি না? নাকি ওই ঘাটতিতে তিনি একদম তলিয়ে যাবেন? এটা যদি আগে অ্যাসেস না করি তাহলে কিন্তু অগ্রসর হওয়া যাবে না’, বলছিলেন তিনি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা রক্তে কোনও সমস্যা আছে কি না সেটিও এই পরীক্ষার আগে নির্ণয় করতে হবে।
কোলনোস্কোপি
পাইলস ও ফিশ্চুলা রোগীদের জন্য এই পরীক্ষা করানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক সাইফুদ্দিন বেন্নুর বলেন, মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে এই পরীক্ষা করানো হয়। মলদ্বার কিংবা কোলনে কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ আছে কি না সেটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করে এই টেস্ট। এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘ ও নমনীয় পাইপের মাধ্যমে করা হয়। এই পরীক্ষা করার আগে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পরীক্ষার আগের দিন রোগী শক্ত কোনও খাবার খেতে পারবেন না। তরল জাতীয় খাবার তাকে খেতে হবে। কোলনোস্কপি একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া এবং এক্ষেত্রে রোগী মৃত্যুর ঘটনা খুব একটা শোনা যায়না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীর উচ্চ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের সমস্যা থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
লাম্বার পাংচার
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে স্পাইনাল ট্যাপও বলা হয়। এই পদ্ধতিতে পিঠের মধ্যে একটি সুঁই ঢুকিয়ে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড নেওয়া হয়। এটি এমন এক ধরণের ফ্লুইড বা রস যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে রক্ষা করে। চিকিৎসকরা বলছেন,এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সেখানে কোনও লিম্ফোমা বা ক্যান্সার কোষ আছে কি না, তা দেখা। অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লিম্ফোমা অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষা করার আগে চিকিৎসকদের জানতে হবে রোগীর ব্লাড সেল ঠিক আছে কিনা এবং রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে তার কোনও সমস্যা আছে কি না। চিকিৎসকরা বলছেন, লাম্বার পাংচার সাধারণত একটি নিরাপদ পদ্ধতি এবং গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব কমই ঘটে।তবে রোগীর অন্যান্য শারীরিক জটিলতা বিবেচনায় না নিলে পরীক্ষার সময় রোগীর জন্য সংকট তৈরির সম্ভাবনা হতে পারে।
এনজিওগ্রাম
হিৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ব্লক নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষা এক ধরণের এক্স-রে করার মতো। রক্তনালির ভেতরে ডাই বা রং প্রবেশ করিয়ে চিকিৎসকরা বোঝার চেষ্টা করেন সেখানে কোনও ব্লক আছে কি না। এনজিওগ্রাম হাত কিংবা পায়ে ছিদ্র করে করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এনজিওগ্রাম পরীক্ষাটি সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ কোনও বিষয় নয়। তবে সে ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। রোগীর বয়স বেশি হলে কিংবা হার্টের কার্যক্ষমতা কম হলে এনজিওগ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ব্লক নির্ণয় করে সেটি খুলে দেবার জন্য স্টেন্টিং করা হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও শল্য চিকিৎসক অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় না নিলে এ ধরনের প্রক্রিয়া সমস্যা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোােন ‘ইনভেসিভ টেস্ট’ করানোর আগে দেখতে হবে রোগীর শারীরিক ফিটনেস আছে কি না। সবধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবার পরেও অবশ্য দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ‘এটা আমরা বলতে পারি না। কেন হয়, কীভাবে হয়! অংকে মেলে না। সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদিও রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তাহলে সেটা আপনি নিয়তির দোষ দিতে পারেন।’ ‘তবে যদি আমার ঘাটতি থাকে তাহলে তো এটাকে আর নিয়তির ওপর চালানো যাবে না,; বলছিলেন সাঈফুদ্দিন বেন্নুর।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved