মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ঝালকাঠিতে চলতি এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে ফিল্মি স্টাইলে শ্রেণিকক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে উল্লাস করেছে একদল ছাত্র। তারা সবাই ওই কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষার্থী। রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১টার পর হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত (তত্বীয়) পরীক্ষা শেষে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়টির ফ্যান, বাথরুমের দরজা, কমোড ও বৈদ্যুতিক লাইট ভাঙচুরসহ ব্যাপক তান্ডব চালায় তারা। আর নিজেদের দায়িত্বহীনতা ঢাকতে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত কেন্দ্রেটির কর্তৃপক্ষ। এতে স্কুলের লক্ষাধিক টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। মোবাইলে ভাঙচুরের কয়েকটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।  হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪৫৯ থেকে ২৩২৪৭৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৫ জন এবং উদ্বোধন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৩২৬০৫ থেকে ২৩২৬২৯ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের চারটি বৈদ্যুতিক পাখা, ৩টি টিউবলাইট এবং কক্ষ সংলগ্ন প্রসাধন রুমে ৬টি ওয়াশরুম/বাথরুমের দরজা, ফ্লাশ প্যান, কমোড ভাঙচুর করা হয়েছে। ২০৫ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪২৮ থেকে ২৩২৪৪৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৬ জন এবং পৌর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৪২৫১৪ থেকে ২৪২৫২৮ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের দুটি বৈদ্যুতিক পাখা এবং ২টি টিউব লাইট তারা ভাঙচুর করে। বিদ্যালয় ভাঙচুরের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না। যা বলার প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব বলবেন। হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আমি ছুটিতে আসছি। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাসুম বিল্লাহ স্যার। তবে ভাঙচুরের ঘটনা শুনেছি। বিদ্যালয়ের কর্মচারী (আয়া) মাকসুদা বেগম জানান, পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীরা হৈ-হুল্লোর করে নেমে যায়। পরে রুম পরিস্কার করতে গিয়ে দেখি সব ভাঙাচোরা। তখন স্যারেরাও দায়িত্ব পালন শেষ করে চলে গেছে।   তারা বলেন, বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের কাজ শেষ হলে উত্তরপত্র জমা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বের হবার পরে কক্ষ পরিদর্শকের বের হবার কথা। তাহলে কক্ষ পরিদর্শক কি পরীক্ষার্থীদের কক্ষে রেখে উত্তরপত্র নিয়ে বের হয়ে গেছেন? কর্মরতরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে সরকারি সম্পদের এতো বড় ক্ষতি হতো না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, প্রতি বছরই এমন ঘটছে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছেলেরা আমাদের ঈর্শা করে। মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে পারে না তারা। কেবল এসএসসি পরীক্ষার সময় স্কুলে ঢোকার সুযোগ পায়। আর প্রতিবছরই প্রতিহিংসা পুরাতে আমাদের বাথরুম এবং বেঞ্চে আজেবাজে কথা লিখে যায়। আর এবার এমন তান্ডব চালাল। অভিযোগ ওঠা ছাত্ররা ঝালকাঠির সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এব্যাপারে ওই স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হারচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রেটিতে সাড়ে ৫শ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই আমার স্কুলের ছাত্র নয়। কিছু মেয়ে পরীক্ষার্থীও পরীক্ষা দিয়েছি। আর এ বিষয়টি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় বা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়নি। তারপরও ঘটানার তদন্তে যদি আমার স্কুলের ছাত্ররা দোষী প্রমাণিত হয় তবে আমি অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, বিষয়টি শুনেছি, গুরুত্বসহকারে দেখছি।