মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : নারী কখনো নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করতে পারে নাকি? শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মনমথপুর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাবাসর এলাকায়। একই এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের মেয়ে পারুল বেগম।
হতদরিদ্র অসহায় নারী পারুল। মা-বাবার মৃত্যুর পর তার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পরে নিজ বাড়ির পাশে মিশন বাজারে ছোট একটি পানের দোকান দেন। অর্থের অভাবে বেশিদিন দোকানটাও ধরে রাখতে পারেননি। পরে বাজারের দোকানদারদের সহযোগিতায় পারুল বেগম বেছে নেন মিশন বাজারে নাইট গার্ডের কাজ। পারুল বেগম দেখতেও ছোটখাটো হলেও তার ছিল আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের কারণেই প্রায় দশ বছর ধরে মিশন বাজারে নাইট গার্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দোকান মালিকরা জানান, পারুল বেগম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই মিশন বাজারের দোকানগুলোতে কখনো চুরি হয়নি। এর আগে অনেকবার দোকানে চুরি হয়েছে। পারুল বেগমের বিশ্বাস আর সততা স্থানীয় মানুষের কাছে যেন গর্বের বিষয়।
জানা যায়, বিয়ের এক মাসের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে সংসার জীবনের। জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকা শহরে। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এখন ছামিউল হক নামের একমাত্র ভাগিনা ছাড়া আপন বলতে কেউই নেই পারুলের। বোনের মৃত্যুর পর নিজ সন্তানের মতো লালন করেছেন তাকে। দোকান পাহারা দেওয়ার বিনিময়ে যা পান তা দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কেটে যায়। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক খণ্ড জমিতে মাটি দিয়ে গড়ে তোলা ঝুপরি ঘরে তার বসবাস। ভাগিনা ছামিউলসহ সেখানেই থাকেন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাই না থাকায় বাকি জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে সরকারি সহযোগিতা চান জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই নারী ।
বাজারের মোটরাসাইকেল মেকানিক সরিফুল ইসলাম বলেন, পারুল দীর্ঘদিন ধরে মিশন হাসপাতাল বাজারে রাতে নাইট গার্ডের কাজ করে। পারুল আগে বাজারে একটা ছোট পানের দোকান চালাত। অর্থের অভাবে সেটার আর করতে পারেনি পরে বাজারে দোকান পাহারা দেয়ার কাজ নেয়। পরুল খুব অহসহায়। বাজার পাহারা দিয়ে যে টাকা পায় তাতে ঠিকমতো তিন বেলা খাবার জোটে না। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা করলে তাকে আর বাজারে পাহারা দিতে হতো না।
বাজারে কাপড় ব্যবসায়ী নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি মিশন বাজারে প্রায় ১০ বছর ধরে কাপড় ও টেইলার্সের ব্যবসা করে আসছি । আমি দোকান দেওয়ার পর থেকে দেখে আসছি পারুল নামের এক ভদ্রমহিলা আমাদের বাজারে নৈশ প্রহরীর কাজ করেন। উনি যেভাবে বাজারের দোকানগুলো পাহারা দেন একজন পরুষ মানুষও এভাবে পারবে না। উনি বাজারে রাতে পাহারা দেন বলে আমরাও নিশ্চিন্তে বাসায় ঘুমাতে পারি।
বাজারের আরেক দোকানদার নাসিম ইসলাম বলেন, পারুল আমাদের বাজারে দীর্ঘদিন থেকে দোকান পাহারা দেন। উনি এই বাজারের নৈশ প্রহরীর কাজ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। আমরা দোকনদাররা ভুলে যদি একটা তালা না দিয়েও চলে যাই তাহলে পারুল আপা ফোন করে বলেন, দোকানে তালা খোলা, বাজারে এসে তালা দিয়ে যাও। ঢাকা পোষ্ট
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved