প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ৩:৩২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৮, ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ
শিক্ষক হয়েও পনের বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে বেতন তুলছেন ঠিকঠাক
দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বিরলে শিক্ষক হয়েও বিগত ১৫ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও বেতন তুলছেন ঠিকঠাক। পুরো সময় দেন রাজনীতিতে। এবার হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় প্রতিবাদ করার সাহস পায়না কেউ। এ বিষয়ে গত ২ মে দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে দূর্ণীতি ও নিয়োগ বানিজ্য সহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আশরাফুল আলম নামের এক ব্যক্তি। এ বিষয়ে হালজায় স্কুুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে রাখায় তোষামোদ করে চলেন তিনি। ওই শিক্ষকের নাম রমা কান্ত রায়। তিনি ১৯৯৮ সালে রানীপুর ইউনিয়নের হালজায় উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন । এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে ভোটে অংশ নিয়েছেন। তাঁর প্রতীক মোটরসাইকেল। হালযায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমাদের স্কুলে ১২জন স্যার আছেন। ১১জনের নাম বলতে পারলেও রমা কান্ত রায়ের নাম বলতে পারেনি তারা। রমা কান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি তো আওয়ামীলীগের নেতা। নাম প্রকাশ না করা স্বত্ত্বে স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন রাজনীতি করিবি না মাস্টারি করিবি। এত বছর ধরে এতগুলো শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করেছেন। ভয়ে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়না। মাসে একবার স্কুলে আসেন হাজিরা খাতায় সই করে চলে যায়। তাঁর স্কুলে না যাওয়ার বিষয়টি চা-দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত সব জায়গায় উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা শিক্ষক হয়েও স্কুলে না গিয়ে পুরো সময় দেন রাজনীতিতে। তিনি বিরল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রমা কান্ত রায় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি উপজেলার তিনটি মাধ্যমিক স্কুলের সভাপতি ও একটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ঠিকাদারী ও প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন। গত কয়েক বছরে অন্তত ৭০০ শতক জমি কিনেছেন উপজেলার বিভিন্ন মৌজায়। প্রায় শতাধিক স্কুল - কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানাযায় সাম্প্রতি সময়ে তিনি তার নির্বাচনী জনসভায় নিজের মুখেই বলছেন একটি ভাঙ্গা সাইকেলে চড়ে বেড়ানোর কথা। সেই মানুষ ১৫ বছরের ব্যবধানে এখন চড়ছেন প্রাইভেট কারে। ভিটেমাটি ছাড়া পৈতৃক কোন জমিজমা না থাকলেও এখন তিনি কয়েক একর জমির মালিক হয়েছেন। বিরল শহরে ১৬ শতক জমির উপরে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করছেন বহুতল ভবন। দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন দেশের বাইরে(রাশিয়া ও ভারত)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা জানান নামমাত্র ঠিকাদারী করেন তিনি। এসব অবৈধ আয়কে বৈধ করতেই ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন। প্রেসের ব্যবসা শুরু করেছেন। উপজেলায় টিআর কাবিখা থেকে শুরু করে মন্দির ও শশ্মানের বরাদ্দগুলো কাজ না করে বিল উত্তলোন করে ভাগাভাগি করেছেন। জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে নির্বাচনী হলফ নামা অনুযায়ী তাদের স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মোট স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৩৯৭ দশমিক ৫ শতক জমি। যা তিনি বিগত ৫ বছরে ক্রয় করেছেন। বিরল উপজেলা সাব-রেজিস্টি অফিস সুএে জানা যায় এই সময়ে তিনি অন্তত ৬৫০ শতক জমির মালিক হয়েছেন। এছাড়াও নগদ টাকার পরিমান ৫৭লাখ ৭০ হাজার ৮০৬ টাকা। ব্যাংকে জমা রেখেছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪ টাকা। যদিও নিজের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি তার হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। হলফনামায় রমা কান্ত রায় আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে কৃষিখাত হতে এক লাখ ২৫ হাজার, ব্যবসা ও ঠিকাদারী হতে ১৪ লাখ ২৫হাজার, শিক্ষকসম্মানী হতে দুই লাখ ২৬ হাজার ২৫৫ টাকা এবং অন্যান্য খাত হতে ৩২ লাখ ২১ হাজার ৯০০টাকা। হলফনামায় অন্যান্য খাতের আয়ের বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি তিনি। হলফনামায় তিনি তার বিরুদ্ধে দুটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। যার একটি নিষ্পত্তি হয়েছে। অপরটি চলমান আছে। তবে হলফনামার বাইরেও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে দিনাজপুর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে জাকিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। মামলা নং- ১০৬/২০২২ বিরল উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ (৬০) বলেন ছেলের চাকরির জন্য এক বিঘা জমি বিক্রি করি ও ৫০ শতক জমি বন্ধক রেখে ছেলের জন্য পিয়ন পদে চাকুরীর জন্য রমা কান্তকে পাঁচ লাখ টাকা দেই। সাত বছর পেরিয়ে গেল গেলে । টাকা দেয়না চাকুরীও দেয়না। হামরা গরিব মানুষ। বেশি কিছু কবার গেলে যদি আরও বিপদ হয়। তখন কি হবে হামার। বিরল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আজাদ মনি বলেন একজন শিক্ষক হয়েও কয়েকটি বিদ্যালয়ের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছে । এটি কিভাবে হয় খোজ খবর নিয়ে বের করেন ? একজন শিক্ষক হয়ে রাতারাতি কয়েক বাড়ীর মালিক হয়েছে রমাকান্ত রায় অবশ্যই তার আয়ের উৎস খুজে বের করার দাবি যানাচ্ছি । পাশাপশি অনেক যুবককের নিকট চাকুরী দেওয়ার জন্য টাকা গ্রহন করেছে প্রতিদিন কেউ কেউ না আমাদেরকে অভিযোগ করে যাচ্ছে । এ বিষয়ে জানতে রমা কান্ত রায়ের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি তো স্কুলে যাই । হলফনামায় সম্পদের বিবরণীর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন হলফ নামায় আমার সম্পদের যে হিসাব দেওয়া আছে তা না দেখে বলা যাবে না । আপনি সরাসরি আমার অফিসে আসেন সাক্ষাতে কথা বলব এ বিষয়ে বিরল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাবেয়া খাতুনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কোন শিক্ষক আমার কাছে অভিযোগ করেননি। কোন শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে না গেলে মনিটরিং করার কোন সুযোগ আছে কি না এবং শিক্ষক রমাকান্ত রায় স্কুলে না গিয়ে বেতন উত্তোলনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে শিক্ষা অফিসার রেগে গিয়ে বলেন আপনি অফিসে আসেন এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলবো না।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved