ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ
বন্যায় গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯ ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পাট, ভুট্টা, আউশ ধান ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল। পানি ওঠায় ১৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, রোবার (৭ জুলাই) বিকাল ৩টায় গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আবারও বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।
গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। প্রকট আকার ধারণ করেছে গোখাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯টি, সাঘাটার ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭২৯টি। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জে ৫২ হাজার, সাঘাটা ১৫ হাজার ১৫০টি ও ফুলছড়ি ৭৪ হাজার ৯০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি।
পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্যাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার প্রভাবে এ পর্যন্ত ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে মাদ্রাসাসহ ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার একটি পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে, জেলায় এ পর্যন্ত ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭টি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, এ পযন্ত জেলার ১৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া একাধিক এনজিও বানবাসী মানুষের সেবায় কাজ করছে।