ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ-বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত গার্মেন্টস কর্মী শাকিনুরকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার বাবা-মা। ছেলের মৃত্যুতে দুঃচিন্তায় পড়েছেন শাকিনুরের স্ত্রী ও ৫ বছরের অবুঝ শিশু সন্তান সহিব এর ভবিষ্যৎ নিয়ে।বাবা-মায়ের উপার্জনের একমাত্র সম্বল ছিল শাকিনুর(২৫)।নিহত শাকিনুর মিয়া, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী সুলতানপুর বালুপাড়া গ্রামের জালিম মিয়ার ছেলে।
নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, পারিবারিক ভাবে সহায় সম্পদ না থাকায় সংসারের অভাব-অনাটনে বেকারত্ব ঘোচাতে প্রায় সাড়ে ৩ বছর পূর্বে স্ত্রী ও অবুঝ শিশুকে নিয়ে শাকিনুর ঢাকায় যায়। শাকিনুর মিয়া,ঢাকার আশুলিয়া থানার ভাদাইল এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে একটি গার্মেন্টস এ চাকুরী করে আসছিল।এর মধ্যে দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠলে ৫ আগস্ট সরকার পদত্যাগের ওইদিন আন্দোলন চলাকালে ঢাকার আশুলিয়া বাইবেল ওভার ব্রীজের সামনে শাকিনুর মিয়া আন্দোলনে অংশ নিলে পুলিশের ছোড়া গুলি শাকিনুরের পিঠ ছেদ করে বুক দিয়ে বেড়িয়ে যায় এবং ওই সময় ঘটনাস্থলেই কিছুক্ষন পর শাকিনুরের মৃত্যু হয়।পরে সন্ধ্যায় শাকিনুরের পরিবার খবর পায় শাকিনুর আন্দোলনে মারা গিয়েছে।এমন খবর শোনার পর বাবা-মাসহ এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।পরদিন শাকিনুরের লাশ বাড়ীতে নিয়ে এসে তাকে দাফন করা হয়।শাকিনুরের মৃত্যুর খবর শুনে ১৬ আগস্ট শহীদ শাকিনুরের গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম,গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মঈনুল হাসান সাদিক,উপজেলা বিএনপির সভাপতি আঃ সামাদ মন্ডলসহ বিএনপির নেতাকর্মীগন।এসময় শহীদ শাকিনুরের কবর জিয়ারত করেন ও পরিবারটির আর্থিক সহযোগিতাসহ শোকাহত পরিবারটির খোজ খবর নেন।
পরিবারটির আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না হওয়ায় শাকিনুরের পরিবারের পাশে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান এলাকাবাসী। এ প্রতিবেদক ১৯ আগস্ট সোমবার তথ্যানুসন্ধানে গেলে চোখে পড়ে ছেলে হারানো পিতা জালিম মিয়া ও মাতা অফিজা বেগম করম্নন দৃশ্য,যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। ছেলেকে হারিয়ে যেন থমকে গেছে তাদের জীবন তেমনি শাকিনুরের বাবা সংসারের হাল ধরা নিয়ে পড়েছেন দুঃচিন্তায়।
শাকিনুরের বাবা জালিম মিয়া ও মা অফিজা বেগম শোকাহত কন্ঠে জানান,অভাবের সংসারে এখন আরো দুঃশ্চিন্তা বাড়লো হামার ছেলে হারাচি এক সপ্তাহ না হতেই হামার ছেলের বউকে চাকরী বাচাতে অবুঝ ছউলকে নিয়ে আবার ঢাকায় যেতে হলো।বউমা ও এই অবুঝ শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো দুঃশ্চিন্তায় পড়ছি।
শাকিনুর মিয়ার পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী শারমিন আক্তার,শিশু সন্তান সহিব মিয়া(৫), বাবা জালিম মিয়া ,মা অফিজা বেগমসহ ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে শাকিনুর ২য়।শাকিনুরের বড় ভাই শাহ কামাল পাগল,সেঝো ভাই শাহ জামাল পড়াশুনা করেন,এক বোনকে বিয়ে হয়েছে, ছোট বোন ২য় শ্রেনিতে পড়ে বলে জানা গেছে।
কিশোরগাড়ী সুলতানপুর বালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আঃ সালাম মিয়া, হারুন অর রশিদ,মামুন মন্ডল জানান,আমরা শাকিনুরের মৃত্যুতে শোকাহত। শাকিনুর ছেলে হিসেবে অত্যন্ত ভালো ছিল।অস্বচ্ছল ও দারিদ্রতার কারনে শাকিনুর ঢাকায় গিয়ে চাকরী করে নিজের ও বাবা-মার সংসার হাল ধরেছিল।তার মৃত্যুতে পরিবারটি এখন অসহায় হয়ে পড়বে। আমরা চাই পরিবারটির প্রতি যেন সরকারীভাবে নজর দেওয়া হয়।
পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ জানান,বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা শাকিনুরের পরিবারকে সব রকম সহযোগিতা করবো এবং আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা জেলা ও উপজেলা বিএনপির মাধ্যমে প্রস্তাবনা করবো যাতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন শহীদ শাকিনুরের নামকরণ করা হয়।