সহিদুর রহমান জুয়েল ঃ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার বিকেল ৪টা ১০মিনিটে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১-এর আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
সিলেট জেলা পুলিশের কোর্ট ইনসপেক্টর জামসেদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এইচ এম শামসুদ্দিন মানিককে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। পরে কোর্টের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। আসামি সাবেক বিচারপতি হওয়ায় আদালত জেলকোড অনুসারে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও আসামি আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আদালত এই বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলকোড অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাবেক বিচারপতি মানিককে আদালতে হাজির করার সময় অনেকে তার দিকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এ সময় কয়েকজন হামলার চেষ্টাও চালান। পরে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
এখনও মামলা হয়নি
কানাইঘাট (দনা) সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাবেক বিচারপতি মানিককে আটক করে বিজিবিসিলেটের কানাইঘাট (দনা) সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাবেক বিচারপতি মানিককে আটক করে বিজিবি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে এখনও মামলা হয়নি।
কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, শনিবার ভোরে সাবেক এই বিচারপতিকে মামলা ছাড়াই সিলেটের কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপর পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে সময় বিজিবি জানায় মামলা করবে। তখন সব প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়। বিজিবি এখনও অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। এলে মামলা হিসেবে অভিযোগটি নথিভুক্ত করে সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে মানিককে বলতে শোনা গেছে, টাকা লাগলে তিনি দেবেন। তার ভাইবোন দেবেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি এ দেশে (ভারত) এত কষ্ট করে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?’
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক বিচারপতির গলায় গামছা বেঁধে ধরে রেখেছেন একজন ব্যক্তি। আরেকজন তার নাম জিজ্ঞেস করছেন। এ সময় বিচারপতি মানিক তার পুরো নাম বলেন এবং বাড়ি মুন্সীগঞ্জ বলে জানান।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিচারপতি অনেকটা অসহায় হয়ে বলতে থাকেন, ‘আমার কাছে ছিল ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড। ভয়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছিলাম। এখানকার দুই যুবক বলেছিল, ১৫ হাজার টাকা দিলে সীমান্ত পার করে দেবে। ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর সেই দুই যুবক ভারত সীমান্তে আমাকে নিয়ে যায়। সীমান্তে নিয়ে মারধর করে আমার কাছে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা এবং মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়লে কলার পাতার ওপর শুইয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, দনা পাতিছড়া গ্রামের রফিকুল হোসেনের ছেলে সাদ্দামের সহায়তায় অবৈধভাবে শুক্রবার বিকালের দিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে তাকে দনা বিজিবির সদস্যরা আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। সাদ্দামের বাড়িটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা। সে ভারতে অবৈধভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রবেশ করে থাকে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাবেক বিচারপতি মানিককে আটক করে বিজিবি। পরে আজ (শনিবার) ভোরে সিলেটের কানাইঘাট দনা সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।