পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকায় অটোরিক্সা মিছিলে অংশ নেয়া শাহীনুর হোসেন পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও কেউ তার খোঁজ রাখেনি। ৭ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনম অসহায় শাহীনুর হোসেন (৪০) এখন চিকিৎসাহীন অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের রতেœশ্বরপুর গ্রামের মৃত গোলজার হোসেনের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রত্যন্ত পল্লী রতেœশ্বরপুর গ্রামে শাহীনুর হোসেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালা ১টি মাটির পরিত্যক্ত ঘর। কলাপাতা দিয়ে ঘেরা আঙ্গিনায় ঘাস আর শেওলায় ভরপুর। সেখানে যে মানুষজন বসবাস করে না তা সহজেই বোঝা যায়। পরিত্যক্ত কাপড়ের পর্দা সরিয়ে গুলিবিদ্ধ শাহীনুরের খোঁজ চাইলে প্রতিবেশী জনৈকা মহিলা জানান, ওরা পাশের বাড়িতে আছেন। লোক মারফতে খবর দিলে আহত শাহীনুর তার বৃদ্ধা মায়ের কাঁধে ভর দিয়ে বাড়ি আসেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকার জুরানে ভাড়া বাসাতে রয়েছেন। সে জানায়,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে গত ২০ জুলাই আমরা দেড় শতাধিক অটোরিকশা চালক মিছিলে অংশগ্রহণ করি। মিছিলটি ঢাকার শনির আখড়ায় পৌছুলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগুতেই এলোপাতাড়ি গুলি। এতে আমরা কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। পরে আর কিছুই মনে নেই। অশ্রুসিক্ত চোখে শাহীনুর বলেন, আমাদের কয়েকজন ওইদিন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আমাকেও মরা ভেবে কেউ নিতে আসেননি। কিন্তু মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে ফেরার পথে ক'জন মুসল্লি আমার নড়াচড়া দেখে স্থানীয় দুটি মেডিকেলে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়। ও সময় আমার শরীর থেকে প্রচুর রক্তরণ হচ্ছিল। পরে ওই অজ্ঞাতনামা মুসল্লিগণ আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান। গুলিটা আমার বাম ঘাড়ের নিচে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাত ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে আমাকে। আমি এখনও জোরে কথা বলতে কিংবা হাঁটাচলাও করতে পারছি না। আমার চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন অনেক টাকা ধার-কর্জ করেছে, এ টাকা পরিশোধ করবো কেমনে- বলতে বলতেই আবারও ভেঙ্গে পড়েন শাহীনুর। আপনারা অটোরিকশা চালক হয়ে আন্দোলনে যোগ দিলেন কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকটা প্তি হয়ে আপে করে শাহীনুর হোসেন বলেন, আমাদের ছেলে- মেয়েরা (ছাত্র-ছাত্রী) অধিকার আদায়ে রাস্তায় গুলি খেয়ে মরছে, আমরা তা মানতে পারি! ছাত্র- জনতার আন্দোলনে সহমত জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম। শাহীনুরের মা রাজেকা খাতুন হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হামার একনা নাতি পাভেল হোসেন ওটাও মানুষিক ভারসাম্যহীন। কখন কি করে ওকে সামলানোয় দায়। নাতনি দু’টো জীবিকার সন্ধানে অল্প বয়সে গার্মেন্টসে চাকরী করে। নাতী, নাতনী, বৌ, বেটা মিলে ৭ সদস্যের সংসার কিভাবে চলবে ? পঙ্গু হয়া এলা নিজে বাঁচবে নাকি সংসার বাঁচাবে! রংপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফুল সরকার আরিফ জানান, প্রথমত গুলিবিদ্ধ শাহীনুরের মরা খবর পেয়েছি,পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি আছেন এবং বেঁচে আছেন। অসহায় সহায় সম্বলহীন ভুমিহীন অটোরিকশা চালক শাহীনুর হোসেনকে দু'দিন পূর্বে গ্রমের বাড়িতে এনে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি। কিন্তু সরকারিভাবে তার কপালে জোটেনি কোনো সাহায্য কিংবা অনুদান !
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved