মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১নং হরণী ইউনিয়নের টাংকি সমাজ, দিদার বাজার সমাজ,কাজিরটেক সমাজ সংলগ্ন অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সময় তিন ফসলা জমি, জোরপূর্বক মাটি খনন করা, বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা বন্ধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১.৩০ মিনিটের দিকে ১নং হরণী ইউনিয়নের দিদার বাজার প্রকল্প এলাকার বিশ্ব বেড়িবাঁধ এর উপর ৩নম্বর,৬নম্বর ও ৯নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক কৃষক ও ভূমিহীন পরিবার এবং স্থানীয় নানা শ্রেণী পেশার বাসিন্দারা মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবার গুলো মাবনবন্ধন থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের জেলা প্রশাসক নোয়াখালী, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের বিষয়ে অবগত করে বলেন যে, দ্রুত বিষয়টি পরিদর্শনের জন্যে একটি প্রতিনিধি টিম সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করার অনুরোধ জানান।
এরপর বিক্ষোভ মিছিল থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে (পাউবো) খাল খনন প্রকল্পে ট্যাংকি ঘাট থেকে দিদার বাজার হয়ে চতলা ঘাট পর্যন্ত অংশের বাসিন্দাদের বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
নোয়াখালী-৬ হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে ডাকাত সদ্দার শাহরাজ, হরণী ইউনিয়ন আ,লীগ নেতা রহমান সহ একটি চক্র বাসিন্দাদের বসতবাড়ি ও ধানি জমির মাটি কেটে খাল খনন ও বেড়িবাঁধ তৈরি করতে জোরপূর্বক বল প্রয়োগ করেছেন। বেড়িবাঁধ প্রকল্পের পার্শ্বে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মালিকদের কোনো নোটিশ না দিয়েই লাল পতাকার খুঁটি দিয়ে মাটি কাটা হয়। অবৈধ ভেকু মেশিন দিয়ে ভেঙে শতাধিক বসতবাড়ি উচ্ছেদ করতে প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন চক্রটি। নিজ ভূমি রক্ষার্থে প্রতিবাদ করতে গেলে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও তার বাহিনির লোকজন।
১নং হরণী ইউনিয়ন শ্রমিকদল দক্ষিণ শাখার সভাপতি ও চেয়ারম্যান ঘাট মাছ বাজারের সভাপতি মোঃ জামশেদ উদ্দিন মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বলেন, গরিব, অসহায় মানুষদের পুনর্বাসন না করে ভূমিহীন পরিবার গুলোর বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নোয়াখালী (হাতিয়ার) পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহম্মেদ পাটোয়ারী জানান, ১নং হরণী ইউনিয়ন এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জায়গার মালিকদের নোটিশ কিংবা জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে চলেন। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রেকর্ডভুক্ত জমির প্রতিটা মালিকের কাগজপত্র আমরা সংগ্রহ করেছি । বসতভিটি, ঘর, গাছপালা সকল কিছুর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সিডিএসপির একটি টিম নিয়ে। আশা করি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ অফিসিয়ালি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত করে পর্যায়ক্রমে সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, এবিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না, আমার এআরও এর সাথে কথা বলেন তারা বিষয়টি দেখাশুনা করেন।
এআরও প্রদীপ দেবনাথের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিক্ষোভ মিছিল থেকে রায়হান উদ্দিন রাফি ও সাইফুদ্দিন দাবি জানান, ১নং হরণী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বসতবাড়ি উচ্ছেদের বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত করে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আমরা দিদার বাজার সমাজ এলাকায় পৈতৃক জমিতে ক্ষতিপূরণ ছাড়া কোনো ধরনের জমি আর পানি উন্নয়ন বোর্ড কে দখল করে প্রকল্পের কাজ করতে দিবো না। কয়েক দিন পূর্বে প্রশাসনকে স্নারকলিপি দিয়ে অবগত করেছি আমরা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা এখনও কোন পদক্ষেপ নেননি এবং উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেননি আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি। আমরা বিশ্ব বেড়িবাঁধ চাই, সেই সাথে আমাদের অধিকারও চাই।