ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ গেল চৈত্র ও বৈশাখ মাসে গাইবান্ধায় দেখা মেলেনি বৃষ্টির। টানা অনাবৃষ্টির কারণে পানি শূন্য হয়ে পড়ছে জেলার প্রায় পুকুর ও খাল-বিল-নদী। ফলে জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে লোকসানের মুখে পড়ছেন মৎস্যচাষিরা।
গাইবান্ধা জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাছ চাষযোগ্য এ জেলায় ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর রয়েছে ২৫ হাজার, বেসরকারি বিল রয়েছে ১১৪টি, সরকারি পুকুর রয়েছে ৩৩১টি। এছাড়া ধানক্ষেতে মাছ চাষ হয় ৮০৩টি জমিতে, খাল ৪২টি, নদী ৬টি, অভয়শ্রম ২৯টি, রেলওয়ে জলাশয় ১৯টি ও ২০১টি প্লাবন ভূমিতেও হয় মাছের চাষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার বছরে মাছের চাহিদা ৪৮ হাজার ৬৩১ মেট্রিকটন। উৎপাদন হয় ৪৬ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন। প্রতিবছর ঘাটতি থাকে ১ হাজার ৭৮১ মেট্রিকটন। তবে চলতি বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর, নালা, খাল-বিল, ডোবা পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। একারণে পুকুরে এখনও মাছের পোনা ছাড়তে পারেনি মৎস্য চাষিরা।
সাদুল্লাপুরের শ্রীরামপুর গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, আমার চারটি পুকুর রয়েছে। সেখানে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতি বছরের এ সময় বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভর্তি থাকে। কিন্তু চলতি বছর একেবারেই পানি শূন্য পুকুরগুলো। যার কারণে পুকুরে এখনো মাছের পোনা ছাড়তে পারিনি।
গোবিন্দগঞ্জের হ্যাচারি মালিক নুর আলম মিয়া জানান, জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষিরা পোনা নিতে আসছেন না। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছি আমি।
গাইবান্ধা সদরের বোয়ালী গ্রামের আব্দুল জলির মিয়া বলেন, স্যালো মেশিনে পুকুরে পানি দিয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করার চেষ্টা করছি। তাপদহের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার সাহস পাচ্ছি না।
সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ বিলের ইজারাদার সেলিম আহম্মেদ তুলিপ জানান, পুকুর লিজ নিয়েছি। কিন্তু এখনও মাছের পোনা ছাড়তে পারেনি। আগামী দিনগুলোতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন পুকুর ডুবে পানি প্লাবিত হলে লোকসান ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
গাইবান্ধা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফয়সাল আজম জানান, ১৮ হাজার ৬৭৫ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছেন জেলায়। আর ৩৪ হাজার ২২৭ জন সরাসরি মাছ চাষে যুক্ত। এ বছরের গেল মাসগুলোতে বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যক্তি মালিকাধীন কিছু পুকুরে পানি না থাকায় এখনো পোনা অবমুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে কিছু সংখ্যাক মাছ চাষিরা সেচ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।