মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : শেখ হাসিনাকে ‘খুনি ও গণহত্যাকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে চিঠি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া শিল্প কারখানায় বিশৃঙ্খলা-অসন্তোষ এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান ফখরুল। গার্মেন্টস, ঔষধ কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ, শিল্পাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি, একজন খুনি-গণহত্যাকারীকে জায়গা দিবেন না। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, অবিলম্বে গণহত্যাকারী-রাষ্ট্রবিরোধী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করুন। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে চিঠি দেন। আইনগত যে ব্যবস্থা আছে, তা গ্রহণ করুন।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। তাদের দিয়ে গুলি করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করে, অকথ্য অত্যাচার করে দেশকে ভীতির রাজ্যে পরিণত করেছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে গেছে, তখন এ দেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে- এটা ঠিক, কিন্তু তার প্রেতাত্মারা এখনো এ দেশে রয়েছে। তারা চুরি-চামারি করে যে সাম্রাজ্য গড়েছিল, দেশের বাইরে টাকা পাচার করে যে সম্পদ তৈরি করেছে- এজন্য তারা তাকে ভুলতে পারে না। তারাই দেশে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে এই শিল্প এলাকাতে। এখানে পোশাক শিল্পে ৫০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করে। এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে কী দেশের অর্থনীতি ঠিক থাকে? বাইরের শক্তির সহায়তায় তারা শিল্প এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
এ সময় শিল্প কারখানায় যাতে কোনো প্রকার অসন্তোষ তৈরি না হয়, সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। পাশাপাশি সরকারকেও মালিক-শ্রমিকদের সাথে বসে সংকট নিরসনের দাবি জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানুষ ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। এ জন্য দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচন দিন। সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, পতিত স্বৈরশাসক দেশে ভিন্নমত সহ্য করতে পারতো না। তাই বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর বছরজুড়েই চলতো নিপীড়ন-নির্যাতন। অথচ দেশের গণতন্ত্র মজবুত করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সহাবস্থান। যেটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কখনও করেনি।
তিনি আরও বলেন, হাজারো জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বাক স্বাধীনতা এবং কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার। যে গণতন্ত্রের জন্য বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত তা পরিপূর্ণতা পাবে না।
সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকেই বিএনপি ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড সহযোগে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন। হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর উপস্থিতিতে দুপুরের আগেই কলেজ মাঠে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনি প্রমুখ নেতারা। এতে কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved