খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: শিশির ভেজা সকালে শস্য ভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। স্নিগ্ধ সকালের রোদ্দুরে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন দেখা দিয়েছে রোপা আমনের পাতায় পাতায়। প্রকৃতি যেনো রোপা আমন মাঠে সবুজ রং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে এর রূপ আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছে। গ্রাম বাংলার দৃশ্য সত্যিই কৃষককে আরও মনোমুগ্ধ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে এখন ফসল ভালো রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কার, পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার ও সার ছিটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে উপজেলার পাকেরহাট, ছাতিয়ানগড়, বালাপাড়া ও দুহশুহ এলাকার বিভিন্ন আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের কষ্টে অর্জিত আমন ধানের সবুজ পাতার রঙে ছেয়ে গেছে মাঠ। কেউ ধান গাছের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। সবুজ পাতায় বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। এতে রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে এই ধান ঘরে উঠবে বলে কৃষকরা জানায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,
চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ১৩৭৬০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন রোপা আমন উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এছাড়া এপর্যন্ত প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আগাম কর্তন হয়েছে। যার গড় ফলন ৬.৪৫ মেট্রিক টন । যা গত বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি। সেই সাথে কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান করার কথাও জানায় কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা বলছেন, অন্যবছরের তুলনায় এ বছর আমন রোপণের শুরু থেকে কৃষককে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। আমন চাষের ভরা মৌসুম আষাঢ় মাসেও ছিলনা আকাশে বৃষ্টির দেখা। যার ফলে সঠিক সময়ে আমন ধান রোপণ করতে পারেনি প্রায় কৃষক। তবে বাদ পড়েননি আমন ধান চাষ করতে কোনো কৃষক। আমনের শুরুতে সেচ এর পানি দিয়ে অনেকে আমন ধান রোপণ করছেন। পরবর্তীতে বৃষ্টির পানিতে রোপা আমনের চারা আরো সমৃদ্ধ করেছে। বড় কোনো দূর্যোগ না হলে আমনের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সার ও কীটনাশক এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ অনেকটাই কম হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।উপজেলা কৃষি বিভাগের তৎপরতায় এবছরও কৃষকরা আশার স্বপ্ন বুনছে।
ছাতিয়ানগড় গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, এক বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। অনাবৃষ্টিতে শুরুতে একটু সমস্যা হলেও এখন ধান গাছের অবস্থা ভালো। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম তাই ভালো ফলন আশা করছি।
বালাপাড়া গ্রামের কৃষক লিটন ইসলাম বলেন, এবছর রোপা আমনের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। সেই সাথে পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা ও ভালো ফলন পেতে সবসময় কৃষি অফিসের পরামর্শ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত এমন থাকলে এবার ভালো ফলন পাওয়া যাবে তবে সবকিছুর দাম বাড়ায় লাভ কমে গেছে বলে তিনি জানান।
আংগারপাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা যদুনাথ রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, রোপা আমনের ক্ষেত পরিচর্যা ও ভালো ফলন উৎপাদনে কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ প্রদান করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশাকরি এবার কৃষকরা লাভবান হবে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, চলতি মৌসুমে রোগ ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব কম থাকায় রোপা আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এতে বন্যায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ফসলহানির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সেই সাথে কৃষি সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আতংকিত না হয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved