সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে শ্রমিকলীগ নেতাদের রাজত্ব বহাল রয়েছে। তাদের দখলকৃত বাংলো-কোয়াটারগুলো থেকে ভাড়া আদায় ও কেনাবেচা কার্যক্রম অব্যাহত। অর্থাৎ তাদের বাণিজ্য আগের মতই চলছে ব্যাপকভাবে। ফলে দীর্ঘদিন থেকে বজায় থাকা এই অবৈধ দখল নিয়ে রেলওয়ে শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখনই ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট আওয়ামী ঘরানার শ্রমিক নেতাদের কবল থেকে সৈয়দপুর রেলওয়েকে বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
রেলওয়ের শহর সৈয়দপুরে রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করে নিজস্ব সম্পত্তির মত ব্যবহার ও বাণিজ্য করা নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রেলওয়ে কারখানা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুন কুমার মন্ডল। তিনি দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যাবত রেলওয়ে কারখানার অদূরে রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কার্যালয়ের কাছেই একটি দ্বিতল বাংলোর উপর তলা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। গীর্জা রোড নামে পরিচিত শহরের সাহেবপাড়া এলাকায় বাংলো নং-টি-১৪ (বি) দখল করে বসবাসের পাশাপাশি এর সামনের জায়গায় বিশাল জায়গা জুড়ে টিনসেট দুইটি বাড়ি তৈরী করে সেটাকে ম্যাচ হিসেবে ভাড়া দিয়ে আর্থিকভাবে সুবিধা ভোগ করছেন। একইসাথে পাশের জায়গায় উন্নতজাতের ঘাস আবাদ করে চলেছেন। অথচ এই বাংলো থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে বা সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা। রেলওয়ে কারখানা সুত্রে জানা যায়, তরুন মন্ডল বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৮২ সালে ট্রেড এ্যাপ্রেনটিস পদে যোগদান করেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারাখানাতেই ছিল তার কর্মস্থল। সর্বশেষ সিএইচআর সপের মিস্ত্রি পদে থেকে গত ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এলপিআর এ গেছেন।
অভিযোগ রয়েছে এই দীর্ঘ সময়ে তিনি বেশিরভাগই কর্মস্থলে নিয়মিত ছিলেন না। বরং ব্যক্তিগত ও সংগঠনের কাজে নিয়োজিত থাকতেন। একইসাথে অবৈধভাবে নানা সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন সনাতনধর্মাবলম্বী ও গোপালগঞ্জের লোক হওয়ায় সুবাদে। বিশেষ করে রেলওয়ের বাংলো দখল, রেলওয়ের জমি দখল, ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে তার সম্পৃক্ততা ছিল খুবই ব্যাপক। এই অবৈধ কাজের মাধ্যমেই তিনি চাকুরীর চেয়েও বেশি অর্থ কামিয়েছেন। যা দিয়ে তিনি অবসরের আগেই সৈয়দপুর শহরের নয়াটোলা এলাকায় ৮ শতক জমি কিনে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। পৌরসভা থেকে ৫ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন করে নিলেও তৈরী করেছেন ৬ তলা। তার উপর সেখানে একটি মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ারও স্থাপন করেছেন অনুমোদন না নিয়েই। এভাবে তিনি রেলওয়ের একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও বনে গেছেন কোটিপতি। এই বহুতল ভবন নির্মাণ ও মোবাইল টাওয়ার বসানো নিয়ে স্থানীয় লোকজনসহ মুক্তিযোদ্ধারা পৌর প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন কে লিখিত অভিযোগ দিলেও রাজনৈতিক প্রভাবে সকলেই নির্বিকার থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এব্যাপারে তরুন মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাংলোটিতে আমি অবৈধভাবে থাকিনা। মুলতঃ এটি মহিলা অঙ্গন নামে রেলওয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সহধর্মীনিদের সংগঠন মহিলা অঙ্গনের নামে বরাদ্দ। আমি সেখানে কেয়ারটেকার হিসেবে বসবাস করি। বিনিময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকি। আর বাংলোর সীমানায় যে বাড়ি নির্মাণ করেছি তা এখন আমার হলেও আমি চলে যাওয়ার পর এই সম্পত্তি মহিলা অঙ্গন তথা রেলওয়েরই থাকবে। এই জায়গাটুকু কি রেলওয়ে থেকে বৈধভাবে লীজ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে রেলওয়ের পাকশী ভুসম্পত্তি অফিসে সম্প্রতি একটি লীজ আবেদন করেছি। এতদিন তাহলে কি অবৈধভাবে এই বাড়ি ভাড়া দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন? জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
মহিলা অঙ্গন নামে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সহধর্মীনিদের সংগঠনের সাধারন সম্পাদক জিওএইচ সপের ইনচার্জ আরিফুর রহমানের স্ত্রী দিলরুবা খানম। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্বামী আরিফুর রহমান বলেন, বাংলোটি মহিলা অঙ্গনের নামে বরাদ্দ আছে বলে জানি। কিন্তু সেখানে তরুন কুমার মন্ডল বসবাস করেন। তাছাড়া তিনি বাংলোর ভিতরের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করে ম্যাচ হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। এগুলো থেকে কোন আয়ই মহিলা অঙ্গন পায়না।
সৈয়দপুর রেলওয়ে ভুসম্পত্তি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি সৈয়দপুরে যোগদানের পর থেকে দেখছি বাংলো নং-টি-২৪ (বি) মহিলা অঙ্গন নামে বরাদ্দ। কিন্তু কবে থেকে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা রেজিষ্ট্রার খাতায় কোন উল্লেখ নেই। আর এই বাংলোর ভাড়া বাবদ রেলওয়ে কোন অর্থই পায়না।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএসডাব্লু) মোস্তফা জাকির হাসান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং তরুন কুমার মন্ডল ক্লিয়ারেন্স এর জন্য যে আবেদন করেছেন তা যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে। তিনি যতদিন থেকে সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন সে হিসেব নিয়ে ভাড়া বাবদ সকল অর্থ আদায় করার পরই তাকে ক্লিয়ারেন্স দেয়া হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved