প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ৯:৫২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ৬:০৯ অপরাহ্ণ
রাজারহাটে চরাঞ্চলে কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আলু চাষ যেন কৃষকের গলার কাঁটা

রাজারহাট কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে বসতভিটে হারিয়ে ভুমিহীন হয়ে অন্যের জমিতে ঠাঁই নিয়েছেন অনেকেই। নদী অঞ্চলের বাসিন্দারা জলবায়ুর অভিঘাতে অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই চরাঞ্চলে আগাম রবি শস্য চাষাবাদ করে থাকেন। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর চাষিরা আগাম আলুর দিকে একটু বেশি ঝুঁকেছিল। তারা চেয়েছিল গত বন্যায় ব্যপক ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আলু তাদের সহায়ক হবে। বাস্তবে যা দেখা গেল তা ভাবনার পুরো উল্টো চিত্র। আলু চাষ করে যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তার চরে আলু চাষে লোকসান হওয়ার কারণে কৃষকের স্ত্রী কৃষককে ছেড়ে চলে যাবার ঘটনাও ঘটেছে। লোকসানের চিন্তায় কেউ কেউ স্ট্রোক করার খবরও রয়েছে এলাকায়। অনেকেই লাভের আশায় বর্গা নিয়ে আলু চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। উচ্চ মূল্যে বীজ সার কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে চাষাবাদ করে মুলধন হারানো আশঙ্কা করছেন চাষীরা। রাজারহাট উপজেলার পাড়ামৌলা গ্রামের বাসিন্দা তিস্তার চরের আলু চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা বীজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার কারণে চড়া দামে আমাদের বীজ কিনতে হয়েছে। সার কীটনাশক জমিতে সেচ দেওয়া ও শ্রমিকের মজুরি সহ প্রতি শতাংশ জমিতে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩ শত টাকা খরচ হয়েছে। তার এই খরচের বিপরীতে আলু বিক্রি করে টাকা পাচ্ছেন ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকা। তার মতে প্রতি শতকে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১ হাজার বা তারও বেশি। কথা হয় তিস্তার চরে আরেক আলু চাষী বাবলু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন তার গালামাল ব্যবসার পুঁজির বড় একটা অংশ আলুতে বিনিয়োগ করেছিলেন লাভের আশায়। আলু চাষে যেন তার কপাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। পুঁজি হারানোর ব্যথায় সেও ভেঙে পড়েছে। এমন চিত্র শুধু তিস্তার চরেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষ করে মাথায় হাত ঠেকেছে পুরো এলাকার আলু চাষীদের। এর মধ্যে কথা হয় স্বাবলম্বী হবার প্রত্যয়ে সমন্বিত ভাবে আলু চাষ করা কৃষক শরিফুলের সাথে। তিনি বলেন আমরা তিনজন মিলে ৩ একর জমিতে আলুর চাষাবাদ করি। আমাদের স্বপ্ন ছিল গত বন্যায় ফসলের ব্যপক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠবে আলু চাষের মাধ্যমে। কিন্তু এখন আলুর বাজার পতনে আমাদের ক্ষতি হবে প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার মতো। আলু চাষের সার ও কীটনাশকের দোকানে বাকীতে নিয়ে আলু চাষ করেছি। এখন সেই টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো আমরা সেই চিন্তায় পড়ে গেছি। পরিবার নিয়ে কিভাবে জীবন যাপন করবো ভেবে দিশেহারা। এদিকে কৃষকরা বলছে এই অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী হিমাগার না থাকায় আলু সংরক্ষণ করার অভাবে মৌসুমেই বিক্রি করতে হচ্ছে এসব আলু। মৌসুমে বাজারে একসাথে অনেক আলু ওঠায় দাম অনেকটা কমে যায়। এজন্য পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মাণ করা গেলে সংরক্ষণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাজারজাত করলে কৃষকদের লোকসান গুনতে হতোনা। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের আরেক আলু চাষী লাভলু মিয়া বলেন - এদেশের কৃষকদের দুর্দশার কথা বিবেচনা করে সরকারিভাবে দেশের বাইরে আলু রপ্তানি করার উদ্যোগ নিলে হয়তো কৃষকরা কিছুটা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারতো।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved