প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৯, ২০২৫, ৭:৪৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৭, ২০২৫, ৯:৪৯ অপরাহ্ণ

মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারী জোরদার করেছে ভারত। এর অংশ হিসেবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পর্যবেক্ষন টাওয়ার থেকে ২৪ ঘন্টা নজরদারী করছেন। চলমান অস্থিরতার মধ্যে শুধু পাকিস্তানই নয়। বাংলাদেশ সীমান্তেও নজরদারী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে বিএসএফের একটি সূত্রে জানা যায়,আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় নজরদারী বৃদ্ধি এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করার জন্য বিএসএফের টহল বাড়ানো হয়েছে।এদিকে বিএসএফের টহল বাড়ানোর ঘটনায় সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । এদিকে বিজিবির পক্ষ থেকেও টহল জোরদার করা হয়েছে বলে বিজিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
শুধু তাই নয়। সামনের দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করতে যাচ্ছে ভারত সরকার। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে রয়েছে পরিকল্পনাটি। পাশাপাশি পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে ২টি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ বা ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি স্থাপন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি সরকারী একটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতীয় বার্তাসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাটালিয়নে ১ হাজারের বেশি সদস্য নিয়ে গঠিত ওই নতুন ইউনিটগুলোতে যুক্ত হবেন। মোট ১৭ হাজার বিএসএফ সদস্য। বর্তমানে বিএসএফের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ১৯৩। নতুন ইউনিটগুলো গঠিত হলে ২শ ছাড়িয়ে যাবে এ সংখ্যা। এরইমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে ওই পরিকল্পনাটি। এখন শুধু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু চূড়ান্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়। এটি অনুমোদন পাওয়া গেলে ধাপে- ধাপে ওই ইউনিটগুলো চালু করা হবে।
বিএসএফ বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে। তারা ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষা করে থাকে এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার এখনো সুরক্ষাবেষ্টনী নেই। যা নদীবাহিত অঞ্চল ও দুর্গম বনাঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় ১ হাজার ৭৬০টি বিএসএফ চৌকি রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় সীমান্তে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভূপ্রকৃতিগত চ্যালেঞ্জের মুখে ওই নতুন ইউনিট ও কমান্ড হেডকোয়ার্টার বিএসএফের সক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
বিশ্লেষকদের মতে,বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন সহ্য করতে না পেরে ভারত বাংলাদেশের ওপর যেন আরো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। হাসিনা-মোদি মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরু থেকেই ব্যর্থ করে দেওয়ার বহু ষড়যন্ত্র করেছেন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা থেকে শুরু করে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে গভীর উদ্বেগে ভুগছে ভারত।
২ দেশ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা বেড়েছে। পাল্টা জবাবে, ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে চরম উত্তেজনা ও আতংক বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটেই বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ওই পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। বিএসএফ ইতোমধ্যে পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। নিয়োগের পরপরই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ইউনিটগুলো কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে।
বিএসএফ বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে। । ওই সীমান্ত এলাকায় ১ হাজার ৭৬০টি বিএসএফ চৌকি রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় সীমান্তে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভূপ্রকৃতিগত চ্যালেঞ্জের মুখে এই নতুন ইউনিট ও কমান্ড হেডকোয়ার্টার বিএসএফের সক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
জানা গেছে, বিএসএফের গুলি, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং নির্যাতন যেন নিত্যদিনের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও থেমে নেই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে প্রাণহানির ঘটনা। পতাকা বৈঠকেই সীমাবদ্ধ সমাধানের পথ। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত বারবার আশ্বাস দিলেও সেটার বাস্তবায়ন শূন্যের কোঠায়। বার বার কথা দিয়ে কথা রাখেনা ভারত। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে গুলি করে বাংলাদেশি হত্যা, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া, নির্যাতন এবং শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা যেন বন্ধই হচ্ছে না।বিএসএফের অযাচিত তৎপরতায় সীমান্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে আতংক।
সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি বিএসএফ। আন্তর্জাতিক সীমান্তে এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটিরও বিচার না হওয়ায় বিএসফের হত্যা এবং নির্যাতন অতীতের যে কোন সময়ে চেয়ে আশংকজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সীমান্ত ঘুরে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় লালমনিরহাট সীমান্ত পথে গবাদিপশু পাচার, আত্মীয়র সঙ্গে দেখা বা ভালো কাজের খোঁজে ২ দেশের মানুষ সীমান্ত পারাপার করে থাকে। শূন্যরেখার কাছে কৃষিকাজ কিংবা মৎস্য আহরণের জন্যও অনেক কে সীমান্ত অতিক্রম করতে হয়।
ভুল করে কেউ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেলে বা অরক্ষিত সীমান্ত সামান্য অতিক্রম করলেই শুরু হয় বিএসএফের আগ্রাসী তৎপরতা। সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের কারণ দেখিয়ে বিএসএফের বিতর্কিত শুট অন সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি সীমান্তে বহাল রয়েছে।অনেক সময় বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে জোর করে বাংলাদেশীদের ভারতে নিয়ে গিয়ে সেখানে গুলি কিংবা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেন ।
লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতন, হত্যা, জোর করে বেড়া নিমান, (ভেকু মেশিন) দিয়ে জমি হতে মাটি কাটা ও বাংলাদেশি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
লালমনিরহাট পাটগ্রাম দহগ্রাম সীমান্তের জুলফিকার, সালা উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, সম্প্রতি বিএসএফের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে কাটাতারার বেড়া লগ্ন এলাকার মানুষের মাঝে আতঃক বিরাজ করছে। অপরদিকে শুনতে পাচ্ছি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাকওয়ার ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)এর আরো নতুন ব্যাটালিয়ন যুক্ত করতেছে। এতে করে দহগ্রাম সীমান্তে কড়া- নজরদারী করবে বিএসএফ। এতে সীমান্তে আতংক এবং উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তারা মনে করেন।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদি ইমরান বলেন,সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে । আর সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়ে এটি ভারতের অভ্যন্তরীন ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দহগ্রাম সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক রেজানুর রহমান রেজা বলেন, পাক- ভারতের ঘটনায় সীমান্তে বিএসএফ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে । শূধু তাই নয়। শুনতে পাচ্ছি আগামি দিনেও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো অতিরিক্ত ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করতে যাচ্ছে ভারত সরকার। এতে আমরা আতংকিত কারন একের পর এক বিএসএফের আগ্রাসী তৎপরতায় সীমান্তবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।অবিলম্বে বিএসএফের তৎপরতা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান হওয়ার পর বিএসএফের প্রতিশ্রিুতি অনুযায়ী সীমান্তে হত্যা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পত্রিকার পাতা ওল্টালেই দেখা যাচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নিহত হয়েছে কিংবা বিএসএফ জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।
সীমান্তে অরাজকতা বন্ধের দাবী সীমান্তের বাসিন্দাদের।