মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ. এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এই ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এ ঈদের আদর্শ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশে দ্বিধাহীনভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশে শর্তহীনভাবে মেনে নেয়াই হল ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করে সেই ত্যাগের কথাকেই স্মরণ করা হয়।
আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে আ. কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হজরত ইব্রাহিম আ. আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও আকুণ্ঠ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ঈদের নামাজের পর আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, আমি প্রত্যাশা করি- প্রতিবারের মত এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে। হজরত ইবরাহিম আ. মহান আল্লাহর উদ্দেশে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
ঈদুল আজহা হজরত ইবরাহিম আ. ও তার পুত্র হজরত ইসমাঈল আ. এর সাথে সম্পর্কিত। হজরত ইবরাহিম আ. স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ ছিল হজরত ইবরাহিম আ. এর জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
আল্লাহর নির্দেশে ইসমাঈলের পরিবর্তে কোরবানি হয় দুম্বা। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণে হজরত ইবরাহিম আ. এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।
আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ। এ ছাড়াও ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি করা যায়। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
পবিত্র কুরআনের সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ সূরা হজে বলা হয়েছে, ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’ কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে- ‘কোরবানির পশুর রক্ত, গোশত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, পৌঁছায় কেবল তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহভীতি’ (সুরা হজ, আয়াত-৩৭)।
রাসূল সা. বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোন কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাত হবে সকাল ৯টায়। এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এক ঘণ্টার বিরতিতে ঈদের ৫টি জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি গণমাধ্যম বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। সংবাদপত্রে থাকছে বিশেষ সংখ্যা।
ঈদ উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
কোরবানির পশুর বর্জ্যে যেন পরিবেশ দূষণ না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকার দু’সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুতবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।