উন্নয়নের ক্ষেত্রে কে কোন দলের এবং কে ভোট দিল না দিল সেটা দেখেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব এলাকায় সমান উন্নয়ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৩ জুলাই) সকালে নিজ কার্যালয়ে গাজীপুর, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিন মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করার প্রধানমন্ত্রী। আর কাউন্সিলরদের শপথ পাঠ করার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আজমত উল্লাকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আর ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। খুলনায় আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক এবং বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বিজয়ী হন।
নবনির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলরদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অনেকে অন্য দলের লোকও আছেন। আমরা কিন্তু কে ভোট দিল না দিল সেটা দেখি না। দেশের সব জনগণের জন্য কাজ করি। আমি যা করি জনগণের জন্য করি, জনগণের কল্যাণে করি। আমি ঘর করে দিয়েছি, সেখানে কে ভোট দিল না দিল সেটা দেখিনি। সব উন্নয়নের ক্ষেত্রেই আমরা সেটা করি।
সবাইকে জনকল্যাণে কাজ করার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, জনগণ আপনাদের স্বতস্ফূর্ত ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা আপনাদের পূরণ করতে হবে।
মেয়র-কাউন্সিলদের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন আপনাদের ওপর নির্ভর করে। আমাকে তিনশ সিট দেখতে হয়। আপনারা নিজ নিজ এলাকা দেখবেন। আপনি আপনার এলাকা নিয়ে পরিকল্পনা করবেন। মানুষের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।
এ সময় প্রত্যেক মেয়র-কাউন্সিলরকে নিজ নিজ এলাকার ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নত করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রচুর বরাদ্দ আছে। সেই বরাদ্দ যেন সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় সেই তাগিদ দেন তিনি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ সালের অগ্নিসন্ত্রাস; সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি বাস, লঞ্চ স্টিমার পোড়ানো; ৫০০ জনের মতো মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা—এই ধরনের ভয়াবহ অবস্থা আমরা দেখেছি। কাজেই সেই ধরনের অবস্থা আর সৃষ্টি করুক, আমরা চাই না। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে; বাংলাদেশের মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে; সবাই যেন উন্নত জীবন পায়—সেটাই আমরা চাই।
জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি এমন একটি দেশে এসেছিলাম, যেখানে আমার পিতা-মাতা ও ভাইয়ের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে খুনিরা ছিল ক্ষমতায়। আর ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, জিয়াউর রহমান যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমাকে বারবার হত্যার চেষ্ট করা হয়েছে। পিতা-মাতার বিচারের জন্য আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এটা পেরেছি ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই।
বৈশ্বিক মহামারির প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও কোভিড-১৯-এর অতিমারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বব্যাপী। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়। বরং বাংলাদেশে তো আমরা এখনও বলিনি যে দুটো-তিনটার বেশি টমেটো কিনতে পারবেন না, ৬টার বেশি ডিম কিনতে পারবেন না। পানি ব্যবহার করতে পারবেন না। বিদ্যুৎ এতটুকুর বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে সেই অবস্থা চলছে। লন্ডনে বাজারে গেলে তো সীমিত জিনিসই কিনতে হবে। তার বেশি কেনা যাবে না। বিদ্যুৎ একটু ব্যবহার করলেই ফাইন দিতে হবে। গাছে পানি দেওয়া যাবে না। বাতলিতে করে একটু একটু করে পানি দিতে হবে। পানি দিয়ে গাড়ি ধোয়া যাবে না। শুধু লন্ডন নয়, ইউরোপের সব জায়গায় এই একই অবস্থা।
মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি জিনিসের দাম বেড়েছে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঈদের আগে পাটগাতী বাজার (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার বাজার) থেকেই ২০০ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। ওই বাজারে ৫৫ ইঞ্চি টিভিও পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে কয়েকটি টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু ছিল না।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি এ জন্যই যে দেশটাকে না চিনলে উন্নতি করবো কীভাবে? যখনই সরকারে এসেছি, সেই মোতাবেক কাজ করেছি, আজ উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমাদের কাজ জনগণের সেবা করা। আমরা সেই চেষ্টাটাই করেছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা।
এ সময় খুব শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করতে যাচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক পরিশ্রমটা করেই আমাদের এই উন্নয়নটা করতে হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনসংখ্যা বেশি। চাষ উপযোগী জমি কম। তারপরও আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও যুদ্ধের কারণে আজ ভোজ্যতেল, গম, জ্বালানি তেল, চিনি—এ রকম অনেক কিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর দাম বিশ্বে বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জানি এখানে অন্য দলেরও অনেকে আছেন। তারপরও কে ভোট দিলো, সেটা দেখে নয়, দেশের প্রত্যেক জনগণের জন্যই আমাদের কাজ করতে হবে। বিষয়টি এমন নয় যে আওয়ামী লীগের লোকজন পাবে, অন্যরা পাবে না। আমরা সবার জন্যই কাজ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের কাঁচা মরিচও আমদানি করতে হয়। কেন করতে হবে? জানি বর্ষাকালে খেতে পানি উঠে যায়। মরিচ তোলা যায় না বা মরিচ পচে যায়। সে জন্য সমস্যা হয়। এখন থেকে আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে। নিজেই আমরা গাছ লাগাবো, উৎপাদন করবো। ছাদবাগান অথবা ভাসমান বাগান করবো। ঝুলন্ত বাগান করবো। আমার এলাকায় কিন্তু আমি শুরু করে দিয়েছি। গণভবনও এখন মোটামুটি খামার বাড়ি করে ফেলেছি। আমার ছাদেও মরিচগাছ আছে।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না। বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে এখন সম্মানের চোখে দেখে। আমরা এই উন্নতিটা করতে পেরেছি বলেই সম্ভব হয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved