পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরভিত্তিক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ব্লকের সভাপতিত্বের পদ নিতে যাচ্ছে। দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক)’কে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে নয়াদিল্লি এ বিষয়ে ঢাকার পরিকল্পনা জানতে চায়। ভারত বিমসটেককে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তাই তারা জানতে চায় নতুন সভাপতি বিমসটেক নিয়ে কি ভাবছে।
বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমারের সঙ্গে বৈঠকের ফলাফল তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে, দু’দিনের সরকারি সফরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার বৃহস্পতিবার সকালে এখানে আসেন এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বিমসটেকের বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বছরের ৩০ নভেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
তিনি আরও বলেন, সামিটে বাংলাদেশ বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবে এবং পরবর্তী মহাসচিব হবেন ভারত থেকে। দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) হলো বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড নিয়ে গঠিত সাতটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অন্তর্জাতিক সংস্থা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিমসটেক-এ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হচ্ছে অর্থনৈতিক। আর ভারতের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হচ্ছে নিরাপত্তা। এক্ষেত্রে উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক ইস্যুগুলো সমন্বয় করবে। বিমসটেকের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজক ঢাকা তার সভাপতিত্বে এই আঞ্চলিক ফোরামকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেবে এবং ঢাকার অগ্রাধিকার হচ্ছে বিমসটেক বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা। অন্যদিকে তিনি বলেন, প্রত্যর্পণ এবং অর্থ পাচারের মতো বিভিন্ন নিরাপত্তা ইস্যুতে বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় নয়াদিল্লী।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা বিআইএমএসটিসি দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ নিয়েও আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু সড়ক যোগাযোগই নয়, আন্তঃসীমান্ত পাওয়ার গ্রিডলাইনের মাধ্যমে সংযোগ নিয়েও আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, ব্যাংককে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সময়, পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা ভবিষ্যতে বিমসটেক কার্যক্রমে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র সচিব এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো রাষ্ট্র এ ধরনের আগ্রহ দেখালে অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে নতুন সদস্য, সংলাপ অংশীদার বা পর্যবেক্ষক হিসেবে নেয়ার বিষয়েও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে। ভারতীয় সচিবের সফর এবং আসন্ন মার্কিন উচ্চপর্যায়ের সফরের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, আজকের বৈঠক অনেক আগেই ঠিক করা হয়েছিল।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সব দিক দিয়ে সম্পর্ক গভীর করতে এবং এই আঞ্চলিক সংস্থার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক প্রক্রিয়ার একজন প্রবল সমর্থক, যা ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজনে প্রকাশ পায়। তিনি বিমসটেক সচিবালয়কে সম্ভাব্য সব উপায়ে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) বিমসটেককে সবচেয়ে কার্যকর ও গতিশীল সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে নয়াদিল্লীর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
উভয় পক্ষই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে যৌথ শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সংযোগ, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি অর্জনে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই বিমসটেক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং এটিকে একটি প্রাণবন্ত ও সফল সংগঠন করার পন্থা ও উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
মোস্তাকিম সরকার
অফিস: বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
বিজ্ঞাপন: ০১৭১৬-৬৪০০৬৯, বার্তা কক্ষঃ ০১৭৩১২৪৪৭৬০
Email: editormuktinews24@gmail.com, info@muktinews24.com
© 2023 মুক্তিনিউজ২৪. All rights reserved