বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেটাই অবাক বিস্ময় : শেখ হাসিনা

সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেটাই অবাক বিস্ময় : শেখ হাসিনা

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর্জেস গ্রেনেড যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর। সেটা ব্যবহার হলো যখন আমরা মানুষের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি। একটা-দুইটা না, ১৩টা গ্রেনেড। আর কত যে তাদের হাতে ছিল কে জানে? সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেটাই অবাক বিস্ময়। আজ সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিভীষিকাময় সেই দিনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কেবল বক্তব্য শেষ করেছি, নিচে নামবো, তখন ফটোগ্রাফার গোর্কি আমাকে বলল- আপা একটু দাঁড়ান আমি ছবি নিতে পারিনি। সাথে সাথে অন্য ফটোগ্রাফাররা বলল আপা একটু দাঁড়ান, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমার পাশে ছিল, সাথে সাথে তিনি টেনে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরল। তিনি বলেন, যেসব গ্রেনেড ছোড়া হলো সেগুলো ট্রাকের ওপরে না পড়ে ট্রাকের ডালার সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত গা বেয়ে রক্ত… আমার কাপড়ে এসে পড়ছে। প্রথমে তিনটা, তারপর একটু বিরতি দিয়ে আবার একটার একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করল। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত, আইভি রহমান মহিলাদের নিয়ে নিচেই ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরেক কর্মী সেন্টুসহ ২২ জন মৃত্যুবরণ করেন। হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী আহত হয়। ৫০০ জনের ওপরে অত্যন্ত খারাপ ভাবে আহত ছিল। সরকারপ্রধান বলেন, সেখানে কেউ উদ্ধার করতে আসতে পারেনি। যারা উদ্ধার করতে এসেছিল, তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস এবং লাঠিচার্জ করা হয়। এখানেই প্রশ্ন কেন টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে? আমি যখন গাড়িতে উঠছি তখন গুলির আওয়াজ, মাহবুব সেখানেই গুলিতে মারা যায়। সেগুলো আমার গাড়ির কাঁচে লাগে। শেখ হাসিনা বলেন, যে গ্রেনেড রণক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, যুদ্ধে ব্যবহার হয়, সে গ্রেনেড মারা হয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। সেদিন আহত এক নারী কর্মীকে তার স্বামী ভ্যানে তুলে নিতে চান, কিন্তু এক পুলিশ সদস্য তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। পুলিশ তো নাগরিকদের জন্য হয়। কিন্তু তাদের আচরণ দেখে তো তখনই সন্দেহ হয়। সেদিনকার সব আলামত নষ্ট করা হয়। কোনো আলামত রাখতে দেয়নি। একজন সেনা অফিসার আলামত রাখতে চেষ্টা করলেও তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি বলেন, তখন তো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, কী ভূমিকা ছিল তার? আহতদের চিকিৎসায়ও বাধা দিয়েছে। এতে কী প্রমাণ হয়? খালেদা-তারেক এটার সঙ্গে জড়িত। তদন্তেও প্রমাণ হয়েছে। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত। খুনিদের জবানবন্দিতে ফুটে উঠেছে। আর ২১ আগস্টে খালেদা-তারেক জড়িত, এটাও প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এত অর্থ কামায়! এফবিআই অফিসার হায়ার করে জয়কে অপহরণ করার জন্য। আমরা তো বুঝিনি। পরে মার্কিন সরকার ওই এফবিআই অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা করে, তদন্তে বেরিয়ে আসে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম। তিনি বলেন, খুনের রাজনীতি বিএনপি ও খালেদা জিয়া করে, এটা তো মানুষের কাছে স্পষ্ট। যে দলের উত্থানই হয়েছে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য। তাদের হাতে রক্ত। আমি একটা বই লিখেছি, সবকিছু লিখেছি। এগুলো মানুষের জানা দরকার। ১৫ আগস্টে কী হয়েছে? আমার বাবা-মা, ভাইবোন সবাইকে হত্যা করেছে। বারবার আঘাত করেছে আমাকে হত্যার জন্যও। ২০১৩-১৪ এর চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এই ছবিগুলো মানুষকে দেখানো উচিত। এ সময় একটা অ্যালবামের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, কত বীভৎস ছবিগুলো! এগুলো আমাদের মানুষকে দেখাতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে প্রশ্ন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা আজ মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- এদেশে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। যার মূলহোতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জামায়াত। ৩৩ বছর লেগেছে আমাদের বাবার হত্যার বিচার পেতে। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? আমাদের বাবার হত্যার বিচার চাওয়ারও অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার বিচার হয়েছে, বিচারের রায় হয়েছে। এই বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত। কিছু আসামি জেলে, মূলহোতা (তারেক রহমান) তো বাইরে। ওর সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেটা ব্যবহার করে বড় বড় কথা বলে। কিছু লোক হয়, এজন্য লম্ফঝম্ফ করে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চিনে নাই। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ছাড়বে না। বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব চলবে না। জিয়া পরিবার খুনি পরিবার। এ সময় গ্রেনেড হামলায় আহতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষের কাছে যান। বলেন, কীভাবে তারা আপনাদের জীবন ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। অথচ দেশের মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখেছে। তিনি আরও বলেন, চেষ্টা করেছে, আমাকে হত্যা করতে। পারে নাই। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিয়েছে, এদেশের মানুষের সেবার করার। আমি তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি। আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষ যেন আর তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্বের বুকে মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। খুনি-সন্ত্রাসী ও মানিলন্ডারিংকারীরা যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সভায় আরও স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দোয়া ও মুনাজাত করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান। সভায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন