বাবার মৃত্যুতেও হাল ছাড়েননি নাসিম
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : আবু সালেহ মো. নাসিম ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ৪২তম হয়েছেন। নওগাঁর নিয়ামতপুরের পানিহারা গ্রামে তার জন্ম। বাবা মোহা. সোফিউর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। মা মোসা. মমতাজ বেগম গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে নাসিম বড়। রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক শেষ করেছেন।তার চাকরিজীবন শুরু হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নাটোরের ‘সহকারী প্রকৌশলী’ হিসেবে। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
আবু সালেহ মো. নাসিম: অনুভূতি তো অবশ্যই চমৎকার। সত্যি বলতে ফলাফলের পিডিএফ ফাইলটিতে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর খুঁজে পাওয়ার অনুভূতি বর্ণনা করা সম্ভব নয়। একটা লক্ষ্যকে স্থির করে এগিয়ে যাওয়ার পর সেটি বাস্তবে পরিণত হলে অনুভূতিটা অন্যরকম হয়। তবু দিনশেষে এটা একটা চাকরি। ভালো লাগাটা এখানেই যে, বেশিরভাগ মানুষ তাদের পছন্দের চাকরিটা করার সুযোগ পান না। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে সে সুযোগটি দিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ।
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
আবু সালেহ মো. নাসিম: চলার পথে বাধা খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। আপনি যা-ই করতে চান না কেন, সহজে তা করতে পারবেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবেই। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে যখন বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছি; তখনই শুরু হলো করোনার প্রকোপ। বাবা চাকরি করতেন বাংলাদেশ বন বিভাগে। করোনাকালীন তিনি স্টেশন কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজার লিংক রোড স্টেশনে কর্মরত। আমি, আম্মা, ছোটবোন রাজশাহীতে। হঠাৎ করেই একদিন ফোনে জানলাম, বাবা অসুস্থ, করোনা পজিটিভ। মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ২ জুন তিনি মারা গেলেন। একদিকে করোনার কারণে চারদিকে কেবল হতাশা আর স্থবিরতা, অন্যদিকে বাবার মৃত্যু। এর মাঝে প্রস্তুতি নেওয়াটা ভীষণ কঠিন ছিল। এমনই একটা সময়ের মধ্যেও আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়েছিল। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো আর সামনে এগোনো ছাড়া উপায় থাকে না। এগোনোটা একরকম অসম্ভব ছিল, কিন্তু হাল ছাড়িনি। তবে এখন অনুভব করি প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে সাফল্য পেলে তা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
আবু সালেহ মো. নাসিম: অনুপ্রেরণা আসলে বাবার থেকেই প্রথম এসেছিল। বিসিএসটা আমার বাবার স্বপ্ন ছিল। বাবা যাওয়ার পর আম্মা সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। শুরু করার পর অনেকের সাহায্য পেয়েছি। আমার ছোট বোন বনানী, প্রস্তুতির সময়টাতে অনেক সাপোর্ট করেছে। বনানী আমাকে নিয়ে খুব আশাবাদী ছিল। সব সময় বলতো, আমি আমার বেস্ট প্রস্তুতিটা নিতে পারলে প্রথম ১০০ জনের ভেতরে থাকবো। আম্মাও একই কথা বলতেন। আসলে সবাই আমাকে নিয়ে এত উচ্চাশা রাখতেন, আমার ভালো না করে উপায় ছিল না। প্রিয় বড় ভাই আমিনুল ইসলাম (প্রভাষক, রাজশাহী সিটি কলেজ, ৩৭তম বিসিএস) আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাশের মানুষগুলো আমাকে এমনভাবে আগলে রেখেছিলেন, আমার জীবনে হতাশা আসতে পারেনি। সফলতা পেয়েছি বলে কাউকেই ভুলে যেতে চাই না। সবার নাম নেওয়া এখানে সম্ভবপর নয় বলে উল্লেখ করতে পারছি না। কিন্তু তাদের অবদানের কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো।
আবু সালেহ মো. নাসিম: বিসিএস নিয়ে আসলে গ্র্যাজুয়েশনের আগে কোনো স্বপ্ন ছিল না। থাকলে আরও আগেই হয়তো এ পথে আসতাম। আমি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলাম একরকম বাধ্য হয়ে, বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে। কিন্তু পড়তে পড়তে এটাই আমার স্বপ্নে পরিণত হয়। একের পর এক ধাপগুলো যখন পার হচ্ছিলাম; তখন স্বপ্নের প্রতি টান আরও বেড়ে যাচ্ছিল।
আবু সালেহ মো. নাসিম: প্রস্তুতিটা ছিল চাকরির পাশাপাশি। অফিসে বই নিয়ে যেতাম। সাধারণত অফিস শুরুর আগেই পৌঁছাতাম। আবার বেরও হতাম লেট করে। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে যতটুকু সময় পেতাম, পড়াশোনার চেষ্টা করতাম। সাইট করার সময় গাড়িতে বই নিয়ে নিতাম। জার্নির পুরো সময়টাই কাজে লাগাতাম। ইচ্ছাকৃত ভাবে সময় নষ্ট করিনি কখনো। নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়েছি, সাধারণ জ্ঞানের আপডেট রাখতাম। জটিল বিষয়গুলো ইউটিউব ভিডিও থেকে শিখেছি। সব মিলিয়ে পড়াশোনাটা ভালোই লেগেছে। ইংরেজি, অঙ্ক আর বাংলায় আগে থেকেই কিছুটা ভালো ধারণা থাকায় বিষয়গুলোতে বাড়তি সময় দিতে হয়নি। ফলে প্রস্তুতি কিছুটা সহজ হয়েছে।
আবু সালেহ মো. নাসিম: আমি ছোটোবেলা থেকেই বাবাকে মানুষের জন্য কাজ করতে দেখেছি। ইচ্ছে ছিল সিভিল সার্ভিসে এসে দেশ ও মানুষের সেবায় কিছুটা হলেও অবদান রাখবো। জীবন তো খুব ছোট, যতটা সময় বেঁচে আছি দেশের পতাকা ভেতরে ধারণ করে বেঁচে থাকতে চাই। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরির জন্য কাজ করতে চাই।