রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

সড়কে নিভে গেছে পরিবারের স্বপ্ন প্রদীপ

সড়কে নিভে গেছে পরিবারের স্বপ্ন প্রদীপ

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : আমার নাতি তানাজ খুব মেধাবী ছিল। পড়াশোনায় অনেক মনোযোগ ছিল তার। ও চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ দেখে আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাই ওকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা আমাদের সব স্বপ্ন কেড়ে নিল। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর শহরের নওহাটা মহল্লার মুক্তারবাড়ির বাসিন্দা মো. মজনু মিয়া। রোববার (৩১ মার্চ) সকালে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় মাইক্রোবাস ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই নাতিকে হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন তিনি। মজনু মিয়া আরও বলেন, আমার দুই নাতি তানাজ ও আনাজসহ আমার মেয়ে, মেয়ের জামাই আমার মেজো ছেলে কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীকে আনতে যাচ্ছিল। আমি একটু অসুস্থ থাকায় যেতে পারিনি। তারা হাসিখুশি ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কে জানতো আমাদের জন্য এমন খবর অপেক্ষা করছে? জানা গেছে, মজনু মিয়ার একমাত্র মেয়ে মনিরা বেগমের বিয়ে হয় শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া গ্রামের বাসিন্দা কুয়েতপ্রবাসী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাবের সঙ্গে। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকায় থাকতেন তারা। বড় মেয়ে মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজ (১৬) শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। রোববার রাতে তানাজের মামা কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীর দেশে ফেরার কথা ছিল। সেজন্য ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাকে আনতে রোববার ভোরে ঢাকা যাচ্ছিলেন মনিরা বেগম, মনিরার স্বামী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব, তাদের সন্তান তানাজ, আনাছসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। পথিমধ্যে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার জামান ফিলিং স্টেশনের সামনে মিথুন সুপার নামে একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী তানাজ ও তার ছোট ভাই আড়াই বছর বয়সী শিশু আনাছ। আহত হয় তাদের বাবা-মাসহ তিনজন। শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু তারেক বলেন, তানাজ খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে খুবই শান্তশিষ্ট ছিল। তানাজ জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবারের এসএসসি পরীক্ষাতেও সে খুব ভালো করেছে। তার এমন মৃত্যুর খবর শুনে আমরা শোকাহত। এদিকে দুই সন্তানের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন বাবা তোরাব ও মা মনিরাসহ তাদের স্বজনরা। রোববার দুপুরে নিহতদের মরদেহ নওহাটা এলাকায় পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় নিহত তানাজ ও আনাছের দাদার বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া এলাকায় তাদের নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন