মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বালি ও পলি জমে ভরে উঠেছে গাইবান্ধা উত্তর পূর্বে দিকের তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী। ভরা মৌসুমেও নদীগুলোতে পানি না থাকায় এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে নাব্য সংকটে প্রায় ৩৫টি নৌ-রুটে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ চলাচল। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ নৌ-শ্রমিক, জেলে ও নদীকে ঘিড়ে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষ। বিশেষ করে জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, গজাড়িয়া, এরেন্ডাবাড়ী আর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর, শ্রীপুর, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী দীর্ঘ ৫২ বছরেও ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। সে কারণে তিস্তা ভরাট হয়ে এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। বছরে মাত্র ৬ মাস মূল নদীতে নৌকা চলাচল করে। গোটা বছর পায়ে হেঁটে পারাপার করতে হয় চরবাসীকে। এক সময় সুন্দরগঞ্জের পাঁচপীর, বেলকা, মীরগঞ্জ ও তারাপুর খেয়াঘাট হতে রংপুর পীরগাছা, কাউনিয়া, উলিপুর, কুড়িগ্রাম, কাশিমবাজার, চিলমারি, রৌমারি, থেকে দেওয়ানগঞ্জ যাওয়া যেতো।
এ ছাড়া গাইবান্ধার কামারজানি ঘাট হতে সাঘাটা, ফুলছড়িতে আর বালাশিঘাট থেকে জামালপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা রুটে নৌ-চলাচল করতো। বর্তমানে নাব্য সংকটে সব রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।কথা হয় হরিপুর চরের নৌ-শ্রমিক রোমেল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে তার ৫টি নৌকা ছিল। নৌকার ব্যবসা দিয়ে সে সংসার চালাতো। এখন মাত্র একটি নৌকা তার। সেটিও বছরের ৪ মাস মূল নদীতে চলাচল করে। নদী ভরে ওঠায় এখন আর নৌকা চলে না। নদীতে আর মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। তাই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। বাদামের চরের ব্যবসায়ী আনছার আলী জানান, জেলা ও উপজেলা শহর হতে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন যানবাহনে জেলা ও উপজেলা শহর হতে মালামাল নিয়ে এসে ব্যবসা করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে নৌ-রুটে মালামাল আনা নেয়া করা হতো। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, তিস্তা নদীর সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে নদী ভাঙন রোধে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা প্রকল্প চলমান রয়েছে। নাব্য সংকট দূরীকরণে নদী খনন ও ড্রেজিং এর জন্য একাধিকবার আবেদন পাঠানো হয়েছে। এটি উপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসন রিপন বলেন, তিস্তার কড়াল গ্রাস হতে ফুলছড়ি ও সাঘাটাবাসীকে রক্ষার জন্য জাতীয় সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। নদী ভাঙন রক্ষায় জিও ব্যাগ, জিও টিউব ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া নদী শাসনের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বরাদ্দ সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হবে।