বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

গ্রামে মদের দোকান বন্ধ করতে বাসিন্দাদের অভিনব উদ্যোগ

গ্রামে মদের দোকান বন্ধ করতে বাসিন্দাদের অভিনব উদ্যোগ

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মদের দোকান বন্ধ করতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন এক গ্রামের বাসিন্দারা। মদের দোকান বন্ধ করতে আয়োজন করা হয় ভোটের। ঘটনাটি রাজস্থানের কোটপুতলি-বেহরোর জেলার একটি গ্রামের। দোকান বন্ধ করার পক্ষে মানুষের রায় জানার পরে প্রশাসন জানিয়েছে আগামী অর্থ বর্ষ থেকে ওই গ্রামে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। এদিকে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে গ্রামে খুশির বন্যা বয়ে গেছে, আবির খেলে, নাচ-গান করে উৎসবে মেতে উঠেছেন মানুষ। কান্সলি নামের ওই গ্রামটিতে একশো বছরেরও বেশি পুরনো প্রাসাদ রয়েছে, যেগুলি দেখে বোঝা যায় যে যথেষ্ট সমৃদ্ধ এই গ্রামটি। গ্রামেরই একটি সরকারি স্কুলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মদের দোকান বন্ধ করার জন্য ভোটের ব্যবস্থা করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। কোটপুতলি-বেহরোরের অতিরিক্ত জেলা কালেক্টর যোগেশ কুমার ডাগুর জানান, পঞ্চায়েতের ৩,৮৭২ জন ভোটারের মধ্যে ২,৯৩২ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯১৯ জন ভোটার মদের দোকান বন্ধের পক্ষে এবং চারজন মদের দোকান বন্ধ না করার পক্ষে ভোট দেন। নয়টি ভোট বাতিল হয়েছে। কান্সলি গ্রাম পঞ্চায়েত ২০২২ সালের জুন মাসে গ্রামে মদের দোকান বন্ধ করার জন্য স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি আবেদন দিয়েছিল। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন মহকুমা কর্মকর্তা গ্রামে একটি সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেন স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রথম সমীক্ষায় ২৪ শতাংশ মানুষ মদের দোকান বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ভোটাভুটির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবগারি কমিশনারের কাছে জানানো হয় এবং সেখান থেকে মদের দোকান বন্ধের নির্দেশিকা জারি হয়। আবগারি কমিশনার অংশদীপ বলেন, মদের দোকান বন্ধের পক্ষে ভোট দেওয়ার খবর এসেছে। আগামী অর্থবর্ষ, অর্থাৎ পহেলা এপ্রিল থেকে কান্সলি গ্রাম পঞ্চায়েতে মদের দোকান বরাদ্দ করা হবে না, আমরা ২৯ ফেব্রুয়ারি আদেশ জারি করেছি। তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশ নায়েক জানান, ২০১৬ সালে মানুষ মদের দোকানের বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন, অনশন করেছিলেন এবং লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন। ফতেপুরাকালাঁ গ্রামের বাসিন্দা সরকারি শিক্ষক সুভাষ চাঁদ যাদবের কথায়, গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ চলছে। এখন গ্রামবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ওই দোকানে সারারাত মদ পাওয়া যায়। গ্রামেই মদ এত সহজলভ্য হওয়ার কারণে মানুষ মদে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। ওই মদের দোকানের মালিক বিক্রম গুর্জর বলছিলে, বহু বছর ধরেই কান্সলিতে মদের দোকান সরানোর দাবি উঠছিল। বছর দুয়েক আগেও এই দোকান কেউ নিতে চাইত না। তারপর আবগারি দফতর এই মদের দোকান আমাকে বরাদ্দ দেয়। গ্রামবাসীরা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানাই। আমি মদের ব্যবসা করি, তবে সবাইকে কোনও ধরনের নেশা না করতে পরামর্শও দিই। এই গ্রামের এক যুবক শৈলেন্দ্র জোশীকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সরকারি মদের দোকান বন্ধ হওয়ার পরে যদি অবৈধভাবে মদ বিক্রি শুরু হয়, তখন তারা কী করবেন? তিনি বলেন, যদি সমস্ত গ্রামবাসী স্বেচ্ছায় মদ নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেয় তবে মদ বিক্রি হবে না, তবে আমরা যুবকরা সবাই মিলে নজর রাখব। দরকার পড়লে পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তা নেব। একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার বলেন, আমরা মদ নিষিদ্ধ করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। স্কুলের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে কান্সলি থেকে আসে। আমাদের স্কুল থেকে ১০০ মিটার দূরেই মদের দোকানটি আছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার সময়ে একজন শিক্ষক বাইরে দাঁড়িয়ে নজর রাখেন যাতে ওদের কেউ বিরক্ত না করে।’

রাজস্থানে মদ নিষিদ্ধের দাবি

পাশের রাজ্য গুজরাটে মদ নিষিদ্ধ। রাজস্থানেও মদ নিষিদ্ধ করার ক্রমাগত দাবি উঠেছে। মদ নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে মদের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার প্রথম দুটি ঘটনাটি রাজসমন্দ জেলার দুটি গ্রামের। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের অন্তত ছয়টি গ্রামে এভাবে মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে।

বেআইনি মদ বিক্রি বন্ধ হবে?

রাজসমন্দ জেলার প্রাক্তন আবগারি কর্মকর্তা রিয়াজউদ্দিন উসমানি বলেন, যে আইনের মাধ্যমে মদের দোকান বন্ধ হচ্ছে, তার মূল ভাবনার সঙ্গে পরিণাম মিলছে না। যেসব গ্রামে ভোট দিয়ে মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে, সেখানে অন্য রাজ্য থেকে মদ এনে বেআইনিভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। মদের দোকান বন্ধ করানোর আগে ওইসব এলাকা থেকে যত বেআইনি মদ ধরা পড়ত, সেইসব জায়গায় বেআইনি মদ এখন বেশি পরিমাণে ধরা পড়ছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন