এসেছে অগ্রহায়ণ পিঠা-পুলির মাস
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মধ্য হেমন্তের শিশিরভেজা প্রকৃতি জানান দেয় শীত আসছে। বছর ঘুরে বাঙালির কৃষিসমাজে আবারও এসেছে আয়োজনের উপলক্ষ। বাংলার আদিগন্ত মাঠ জুড়ে এখন হলুদে-সবুজে একাকার নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। সোনালি ধানের প্রাচুর্য। আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মনপ্রাণ। বাড়ির উঠান ভরে উঠবে নতুন ধানের ম ম গন্ধে। বাঙালির প্রধান অন্ন আমন ধান কাটার সময়। বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী, আজ ১ অগ্রহায়ণ। অনেক পালাবদলেও বাঙালির নবান্ন পুরোপুরি মলিন হয়নি। আবহমান বাংলার অন্যতম উৎসব এটি।
কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরো ভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদিকাল থেকে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চালে হয় নবান্ন উৎসব। হিন্দু লোককথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বার্ষিক মাঙ্গলিক দিন। নতুন আমন চালের ভাত বিবিধ ব্যঞ্জনে আহার ও পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে কোথাও কোথাও দোয়া, মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। হিন্দু কৃষকের ঘরে ঘরে ধুমধামে চলে পূজার আয়োজন। হিন্দুদের বারোমাসের তেরো পার্বণের বড় পার্বণ হলো এই নবান্ন। এই নবান্নকে ঘিরে তাদের বারো পূজার প্রচলন আছে। তারা নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক প্রভৃতি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবার সদস্যরা নতুন গুড়সহ নবান্ন গ্রহণ করেন। হিন্দু লোকবিশ্বাসে কাকের মাধ্যমে ঐ খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলি’। বাংলাদেশে যেসব উৎসব হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রচলিত নবান্ন উৎসব। হেমন্তে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। নবান্ন অর্থ- নতুন অন্ন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। আমাদের দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল ঘরে তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে ডেকে খাওয়ানো হয়। তথ্য বলছে, অগ্রহায়ণ ‘ফসলি’ নামের সনটা প্রথম আধুনিকীকরণ করেছিলেন মোগল সম্রাট আকবরের অন্যতম সভাসদ ‘ফাতেউল্লাহ’। তবে অনেক গবেষকের মতে, সম্রাট আকবরের সময় বাংলা সনকে আধুনিকীকরণের আগে বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। অগ্রহায়ণ শব্দের অর্থটাও অনেকটা তা-ই দাঁড়ায়।