বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

ব্রাজিলের ৭ পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক, নিয়ম কী বলে?

ব্রাজিলের ৭ পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক, নিয়ম কী বলে?

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক :আসন্ন ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ শেষ হওয়ার পরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি অস্বাভাবিক ঘটনা—ম্যাচ চলাকালীন ব্রাজিল দলের সাতটি পরিবর্তন। সাধারণত, নিয়ম অনুযায়ী এক ম্যাচে পাঁচটি পরিবর্তন করা যায়, অতিরিক্ত সময়ে হলে ছয়টি। তাহলে কীভাবে সাতটি পরিবর্তন করল ব্রাজিল?

এ নিয়ে কলম্বিয়া অভিযোগও তুলেছে। তবে জানা যায় শেষ পর্যন্ত কনমেবল (CONMEBOL) নিয়ম অনুযায়ী সেলেসাওদের সিদ্ধান্ত বৈধই ছিল।

ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিল প্রথম পরিবর্তনটি করে ২৮তম মিনিটে, যখন জেরসনকে তুলে জোয়েলিনটনকে মাঠে নামান কোচ দোরিভাল জুনিয়র। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় দ্বিতীয়ার্ধে এক ভয়াবহ সংঘর্ষে।

ব্রাজিলের গোলরক্ষক আলিসন বেকার ও কলম্বিয়ার ডেভিনসন সানচেজ আকাশের দিকে লাফিয়ে ওঠা একটি বলে মাথায়-মাথায় প্রচণ্ড ধাক্কা খান। মুহূর্তেই খেলা বন্ধ হয়ে যায়, এবং চিকিৎসকরা দ্রুত মাঠে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ চেকআপের পর দেখা যায়, দুজনেরই অবস্থা গুরুতর, ফলে বাধ্য হয়েই তাদের মাঠ ছাড়তে হয়।

ঠিক এই ঘটনার কারণেই দুই দলই অতিরিক্ত দুটি করে পরিবর্তনের সুযোগ পায়। কনমেবলের অনুচ্ছেদ ৯৬ অনুযায়ী, সন্দেহজনক মাথার আঘাত বা concussion-এর ক্ষেত্রে প্রত্যেক দল একবার করে অতিরিক্ত পরিবর্তন করতে পারবে। যেহেতু একসঙ্গে দুই খেলোয়াড় (আলিসন ও সানচেজ) মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন, তাই ব্রাজিল ও কলম্বিয়া উভয় দলই দুটি অতিরিক্ত পরিবর্তন করার অনুমতি পায়।

ব্রাজিলের সাতটি পরিবর্তন কীভাবে হলো?

এই নিয়মের সুবিধা নিয়ে ব্রাজিল পরবর্তীতে নিচের সাতটি পরিবর্তন করে—

১. ২৮ মিনিট: জেরসন → জোয়েলিনটন

২. ৬০ মিনিট: পেদ্রো → কুনহা

৩. ৭৮ মিনিট: ব্রুনো গুইমারায়েস → আন্দ্রে

৪. ৭৮ মিনিট: রদ্রিগো → সাভিও

৫. ৭৯ মিনিট: ভান্দারসন → ওয়েসলি

৬. ৭৭ মিনিট: মাথায় আঘাত পাওয়া কারণে কনকাশন পরিবর্তন হিসেবে অনুমোদিত— আলিসনের বদলে বেন্তো নামানো হয়

৭. ১০২ মিনিট: শেষ মুহূর্তে রক্ষণকে শক্তিশালী করতে ভিনিসিয়ুস → লিও অর্তিজ

এই শেষ পরিবর্তন নিয়েই মূলত বিতর্ক তৈরি হয়। কলম্বিয়া মনে করছিল, এটি নিয়ম বহির্ভূত। তবে কনমেবলের স্পষ্ট ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যেহেতু concussion (মাথায় আঘাত) পরিবর্তন ব্যবহৃত হয়েছিল, তাই ব্রাজিল অতিরিক্ত এক পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছিল।

কনমেবলের নিয়ম কী বলে?

কনমেবল তাদের ‘অনুচ্ছেদ ৯৬ – সন্দেহজনক মাথার আঘাত ও কনকাশন পরিবর্তন’ এ স্পষ্টভাবে বলেছে—

প্রত্যেক দল সন্দেহজনক মাথার আঘাতের ক্ষেত্রে একবার করে অতিরিক্ত পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। যদি কনকাশন পরিবর্তন করা হয়, তাহলে প্রতিপক্ষ দলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অতিরিক্ত পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। এই পরিবর্তনের জন্য রেফারি বা চতুর্থ রেফারিকে জানাতে হবে, এবং এটি একটি বিশেষ গোলাপি কার্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যদি কোনো দল তাদের সব স্বাভাবিক পরিবর্তনের সুযোগ ব্যবহার করে ফেলে, তবে কনকাশন পরিবর্তনকে সাধারণ পরিবর্তনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। একবার কনকাশন সন্দেহ হলে সেই খেলোয়াড় ম্যাচে আর ফিরতে পারবে না এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কনমেবলের মেডিকেল রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কলম্বিয়ার কোচ নেস্টর লরেন্সো ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ‘ব্রাজিলের অতিরিক্ত পরিবর্তন আমাদের রণকৌশলে প্রভাব ফেলেছে। আমরা নিয়ম বুঝতে দেরি করে ফেলেছিলাম।’

তবে কনমেবল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ব্রাজিলের পরিবর্তনগুলো নিয়মের মধ্যেই ছিল। ফলে কলম্বিয়ার আপত্তি গ্রহণযোগ্য হয়নি।

এই জয় সেলেসাওদের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলে সাময়িকভাবে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে গেছে, তবে সামনে অপেক্ষা আরও বড় পরীক্ষা—চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মহারণ!

২৫ মার্চ মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে মেসির দলকে আতিথ্য নেবে ব্রাজিল। তবে হলুদ কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে হারাচ্ছে দরিভালের দল। অন্যদিকে, কলম্বিয়া তাদের পরবর্তী ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে নামবে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন