বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আওয়ামী ও জাপার নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাপ শুরু,নীরব বিএনপি
এএফএম মমতাজুর রহমান
আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) বিএনপির এলাকা হিসাবে খ্যাত এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৩ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বিএনপির সংসদ সদস্য ছিল। ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় এ আসনটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আওয়ামী লীগের শরীক দল জাতীয় পার্টি থেকে এ্যাড. নুরুল ইসলাম তালুকদার নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধ মামলায় পলাতক আসামী আব্দুল মোমিন তালুকদারের স্ত্রী মাছুদা মোমিন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এ্যাড. নুরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। তবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ তাদের শরিকদলকে ছাড় দিতে নারাজ। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত জেলায় দলটির নেতাকর্মীদের নির্বাচন নিয়ে কোনো তোড়জোর না থাকলেও বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আওয়ামী ও জাপার নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে।
সংসদীয় এ আসনটিতে ইতোমধ্যে মতাসীন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় প্রধানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, পোস্টার লাগিয়ে এলাকায় প্রার্থীতার আগাম বার্তা দিচ্ছেন। যোগাযোগসহ উঠান বৈঠক, পথ সভা, লিফলেট বিতরণ ও সভা-সমাবেশ করছেন তারা। একইভাবে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এর বিপরীতে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের অনুসারীদলগুলো সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দলীয়ভাবে দলের সম্ভাব্যপ্রার্থী হিসেবে গণসংযোগের কোনো নির্দেশনা না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও কেউ মাঠে নামছেন না।
এবার এ আসনে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. তবিবর রহমান তবি, দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান সেলিম, আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা অজয় কুমার, আ’লীগ নেত্রী সান্তাহার ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি। দীর্ঘদিন মতার বাহিরে থাকা বিএনপি এ আসনটিকে ফিরিয়ে পেতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। তারা তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করছে। বিএনপি থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ্যাড. হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মুহিত তালুকদার, বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন নয়ন।
এছাড়াও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. নূরুল ইসলাম তালুকদার (জিএম কাদের গ্রুপ) ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত জাকারিয়া হোসাইন (রওশন গ্রুপ) , ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অধ্যাপক শাহাজাহান আলী তালুকদার নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে জামায়াত যদি জোটগতভাবে নির্বাচনে না যায় সেেেত্র জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর আব্দুল গনি মন্ডলের নাম শোনা যাচ্ছে।
আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মুহিত তালুকদার বলেন, আমরা এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন ছাড়া কিছুই ভাবছি না।
আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যার্শী ছিলাম। তৃণমুল নেতা-কর্মি ও সাধারন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন প্রদান করবেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. নূরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। যদি দল চান তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক।
আগামী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন মো. জাকারিয়া হোসাইন। ইতিমধ্যে তিনি জনগণের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি মনোনয়নের লাভের জন্য মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগ ও তৃণমূল মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থেকে এলাকায় উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।