৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রিতে ক্রেতা বাড়ে মামুনের, ক্ষোভ বাড়ে খোকনের
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানি বাজারে একত্রে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন মামুন ও খোকন। ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্তের পর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ব্যবসা আলাদা করেন মামুন। ভোক্তার নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি শুরু করায় মামুনের ক্রেতা বেড়ে যায়। অন্যদিকে খোকনের ক্রেতা যায় কমে। এ নিয়ে খোকন ও মামুনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।গত ২০ জানুয়ারি উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার মধ্যে খোকন ছুরি দিয়ে মামুনকে প্রকাশ্যে পেটে ও বুকের ডান পাশে কুপিয়ে পালিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান ভুক্তভোগী মাংস ব্যবসায়ী মামুন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ওরফে খোকনকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতে করে সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজধানীর শাজাহানপুরের একজন মাংস ব্যবসায়ী ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করে। যা ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে ওই মাংস ব্যবসায়ীর দেখাদেখি আরো কিছু ব্যবসায়ী প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তীতে গত ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এসময় যে সব মাংস ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করতে থাকে, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদেরকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি না করলে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকেন। সম্প্রতি রাজধানীর শাহাজানপুরে কম দামে মাংস বিক্রি করায় আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি প্রদানকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। কমান্ডার মঈন বলেন, গত ২০ জানুয়ারি দুপুর ১টায় রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী হাটে ন্যায্য মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে অপর এক মাংস ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণ তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে রাজশাহীর বাঘা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৪/১৪। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গত রাতে র্যাব-৫ ও র্যাব-৮ এর যৌথ দল মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রধান আসামি মিজানুর রহমান ওরফে খোকনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার খোকন রাজশাহী বাঘার মৃত খোদা বক্সের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে গ্রেপ্তার খোকন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগী মামুন গ্রেপ্তার খোকনের নিকট আত্মীয়। তারা রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানি বাজারে একত্রে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে আলাদাভাবে মাংস বিক্রির ব্যবসা আলাদা করে মামুন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দের সূত্রপাত হয়। নির্ধারিত ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি শুরুর পর তার দোকানে ক্রেতা বেড়ে যায়। অপরদিকে বেশি দামে মাংস বিক্রির কারণে খোকনের দোকানে কমে যায় বিক্রি। নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করা নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি খোকন ও মামুনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে খোকন মাংস কাটার ছুরি দিয়ে মামুনকে প্রকাশ্যে পেটে ও বুকের ডান পাশে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়।গ্রেপ্তার খোকন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে প্রথমে রাজশাহীর তাহিরপুরে তার এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করে। পরবর্তীতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে আত্মগোপনে তার পূর্ব পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে সেখানে ড্রেজার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গতরাতে র্যাবের যৌথ দল তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার খোকন মাংস ব্যবসার পাশাপাশি মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। খোকনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বাঘা থানায় মাদক মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন খোকন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।