রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই : প্রধানমন্ত্রী

শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই : প্রধানমন্ত্রী

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসির উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখা যায়নি। তবে বর্তমানে সেখানে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। যা পূর্ণতা পেলে বদলে যাবে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির রূপ। বিশাল এই প্রকল্পের পেছনে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

 

এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টাকার হিসাব নয়, বরং দেশের চলচ্চিত্র যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, শিল্পীরা যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই।

 

 

 

 

 

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রদান শেষে সিনেমা নিয়ে বেশ কিছু প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।

 

বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বলেছেন, ‘টাকার অংক দিয়ে হিসাব করি না, আমাদের শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই। আমরা গাজীপুরে ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি। এটাও বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছিলেন। এটার প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজও হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের শুটিং যাতে করা যায়, সেই ব্যবস্থা থাকবে। আমরা চাই দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। সেই সঙ্গে শিল্পী-কুশলী সবাইকে আমি এই আহ্বান জানাই, এদিকে আরও মনোযোগ দিন। যেহেতু মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে, তাই তারা বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে।’

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, ‘একটি দেশের সমাজকে চলচ্চিত্র সচেতন করতে পারে, আনন্দ দিতে পারে, সংস্কার করতে পারে, ইতিহাসকে ধারণ করতে পারে, দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।’

 

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ছবির শিল্পীদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নির্মাতা-শিল্পীরা প্রত্যেকেই চমৎকার কাজ করেছেন। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পীরা, তারা এত চমৎকার অভিনয় করেছে। সম্পূর্ণ অন্তর দিয়ে কাজ করেছে। এজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বড় অর্জন হয়ে থাকবে।’

 

 

 

যদিও খুব একটা অবসর মেলে না। তবু মাঝে মধ্যে ছবি দেখেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তার ভাষ্য, ‘হলে যেহেতু সিনেমা দেখা হয় না, যখন বিমানে চড়ি, তখন কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমা দেখি। কিছু দিন আগে সাউথ আফ্রিকায় যাওয়ার সময় পরপর দুইটা সিনেমা দেখলাম। মাঝে মাঝে অনেকে আমাকে পেনড্রাইভে ছবি পাঠায়, সেগুলাও দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু সরকার চালানোর পাশাপাশি তো অতো সময় পাওয়া যায় না।’

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়ে এফডিসি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং তার হাত দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলে চলচ্চিত্রের যাত্রা হয়েছিল। তিনি জানতেন, অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পশ্চিমাদের হিংস্র থাবা পড়েছে। সে জন্য তিনি এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর থেকে বহু কালজয়ী চলচ্চিত্র যেমন নির্মিত হয়েছে, বহু কালজয়ী শিল্পী তৈরি হয়েছেন। চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম যেখানে সাহিত্য-শিল্পের সব শাখার সমন্বয় হয়েছে। এবারের আসরে যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের সকলকে অভিনন্দন।’

 

 

এ বছর আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন যৌথভাবে চিত্রনায়িকা রোজিনা ও অভিনেতা কামরুল আলম খান খসরু। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রোজিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে এফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যার ফলে আমরা অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছি, আমি আপনাদের রোজিনা হতে পেরেছি। এই পুরস্কার পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জুরি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার দীর্ঘ পথচলায় যারা সহযোগিতা করেছেন, পরিচালক-প্রযোজক, সহকর্মী, সাংবাদিক ও দর্শক সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার পুরস্কার তাদের সবার প্রতি উৎসর্গ করলাম।’

 

পুরস্কার প্রদান ও বক্তব্য শেষে ছিলো সাংস্কৃতিক পর্ব। যেখানে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার সঞ্চালনায় বিখ্যাত বেশ ক’টি গানের সঙ্গে মঞ্চে নেচেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি ও তমা মির্জা। এছাড়াও ছিলো সাইমন সাদিক-দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূর ও জায়েদ খান-আঁচলের দ্বৈত পরিবেশনা। এছাড়াও গান শুনিয়েছেন বালাম ও কোনাল।

 

 

 

২০২২ সালের সিনেমা থেকে এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩২টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এতে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা খসরু (বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আলম খান খসরু) ও অভিনেত্রী রোজিনাকে (রওশন আর রোজিনা)।

 

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার যুগ্মভাবে পেয়েছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও ‘পরাণ’। প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন সুচিন্ত্য চৌধুরী (চঞ্চল চৌধুরী)। ‘হাওয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন।

 

 

আর প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান ও রিকিতা নন্দিনী শিমু। যথাক্রমে ‘বিউটি সার্কাস’ ও ‘শিমু’ সিনেমার জন্য তারা এ পুরস্কার পেয়েছেন।

 

শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন। ‘শিমু’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এ পুরস্কারটি পেয়েছেন। এছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন খান, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েছেন আফসানা করিম (আফসানা মিমি)। ‘পরাণ’  ও ‘পাপ-পুণ্য’র জন্য তারা এ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

 

 

 

শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে এস. এম. কামরুল আহসানের ‘ঘরে ফেরা’। আর শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হয়েছে ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়ার ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।

 

খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন সুভাশিষ ভৌমিক, ‘দেশান্তর’ সিনেমার জন্য। আর শ্রেষ্ঠ কৌতুক চরিত্রে পুরস্কার পেয়েছেন সাইফুল ইমাম (দিপু ইমাম), ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রের জন্য।

 

 

যুগ্মভাবে শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হয়েছে যথাক্রমে ‘রোহিঙ্গা’ ও ‘বীরত্ব’ সিনেমার জন্য বৃষ্টি আক্তার ও মুনতাহা এমিলিয়া। শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক মাহমুদুল ইসলাশ খান (রিপন খান), ‘পায়ের ছাপ’ চলচ্চিত্রের জন্য। শ্রেষ্ঠ গায়ক শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা (বাপ্পা মজুমদার)। ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এ ‘এ মন ভিজে যায়…’ গানের জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। শ্রেষ্ঠ গায়িকা হয়েছেন আতিয়া আক্তার আনিসা। শ্রেষ্ঠ গীতিকার রবিউল ইসলাম জীবন ও শ্রেষ্ঠ সুরকার শওকত আলী ইমন।

 

এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছেন- শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার ফারজিনা আক্তার ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’, শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার যুগ্নভাবে ফরিদুর রেজা সাগর ‘দামাল’ ও খোরশেদ আলম খসরু ‘গলুই’, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার মুহাম্মদ আবদুল কাইউম ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা এস এ হক অলীক ‘গলুই’, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক আসাদুজ্জামান মজনু ‘রোহিঙ্গা’, ‘শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ ‘হাওয়া’, শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান খোকন মোল্লা ‘অপারেশন সুন্দরবন’, শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জায় তানসিনা শাওন ‘শিমু’, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সুজন মাহমুদ ‘শিমু’, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিমাদ্রি বড়ুয়া ‘রোহিঙ্গা’।

 

 

 

পুরস্কার হিসেবে নির্বাচিত সবাইকে দেওয়া হয়েছে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের সোনা দিয়ে তৈরি একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও এককালীন সম্মানী ও সম্মাননাপত্র। আজীবন সম্মাননার জন্য ৩ লাখ, শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য ২ লাখ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা করে।

 

এবিএন/জেডি

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন