শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনে পার্বতীপুরে আজ তেল আসবে

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনে পার্বতীপুরে আজ তেল আসবে

সোহেল সানীঃ
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের ডিজেলের স্টোরেজ ট্যাঙ্ক নির্মাণকাজ শেষ না হলেও আজ শনিবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভার্চুয়ালি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে স্থাপিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের রিসিভ টার্মিনালের জ¦ালানি তেল পাঠানোর এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করবেন। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের  পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান বলেন, আজ শনিবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে রিসিপ্ট পাইপলাইন টার্মিনালের প্যান্ডেলে স্থাপিত টিভি পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বিপিসির দুই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক, পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাঈল, পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপো ইনচার্জ এমরানুল হাসান ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার কাজী মো. রবিউল আলম উপস্থিত থাকবেন। এরআগে বিকেল ৪টায় পার্বতীপুুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়নে উদ্ধোধন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হবে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারির শিলিগুড়ি মাকেটিং টার্মিনাল থেকে সীমান্তের বর্ডার অতিক্রম করে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর হয়ে পার্বতীপুর ডিপোতে সংযুক্ত হয়েছে পাইপটি। এর আগে ১০ মার্চ শুক্রবার প্রকল্প উদ্বোধনের রিসিভ টার্মিনাল পরিদর্শন আসেন বিদ্যুৎ জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ খায়ইরুজ্জামান মজুমদার, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জরেন্দ্র নাথ ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ। শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির জন্য বিপিসির পার্বতীপুরের রিসিভ টার্মিনালটি এখন প্রস্তুত। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও পার্বতীপুরের স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এক বনাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত থাকবেন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাাদকগন। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি ভিডিওর মাধ্যমে যুক্ত হবে  প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান ও পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ঈসমাইল। গত ১০ মার্চ পরিদর্শনে আসা সরকারের বিদ্যুত, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতি মন্ত্রী নসরুল হামিদ ও বিপিসির চেয়ারম্যান একে আজাদ জানিয়েছেন, রিসিভ টার্মিনালের কন্ট্রোল রুমটি সবচেয়ে অত্যাধুনিক, কম্পিউটারাইজ ও অটোমেটেড। যা যুক্ত হেড অফিসের সাথে। দপ্তরে বসেই মোবাইলে পাইপলাইনের তেলের পরিস্থিতি দেখতে পারবেন। মাঠ পর্যায়ে পাইপলাইনের কেউ ক্ষতির চেষ্টা করলে তা কন্ট্রোল রুমে ধরা পড়বে। পাইপলাইনের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অংশে ১২৬ কিলোমিটার দূরত্বে প্রতি ৩০ কিলোমিটারে ৫টি এসভি স্টেশন (সেকশনালইজিং ভালভ) স্থাপন করা হয়েছে। আমরা ভারতকে যে মানের নমুনা দিয়েছি সেভাবেই ১০ পিপিএম উন্নতমানের রিফাইন ডিজেল আসবে। উত্তরের ১৬ জেলায় নিরিবিচ্ছন্নভাবে ও সারা বছর ডিজেল সরবরাহ রাখতেই এই ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ভূমিকা রাখবে। আগে খুলনা ও চট্রগ্রাম থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে তেল পরিবহনের তেল আসতে সময় আগতো ৬-৭দিন। সাশ্রয়ী উপায়ে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে জ¦ালানী সরবরাহে এটি একটি মাইল ফলক হবে বলে মন্তব্য করেন। পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা ডিজেল সংরক্ষনের জন্য পার্বতীপুর রিসিভ টার্মিনাল সাইডে ২৯ হাজার মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতার একটি বাফার ডিপো নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার মেট্রিক টন জ¦ালানি মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। বিপিসির সূত্র জনায়, চুক্তি অনুযায়ী ভারত ১৫ বছর ডিজেল সরবরাহ করবে। প্রথম ৩ বছর ২ লাখ মে, টন, পরবর্তী ৩ বছর ৩ লাখ মেট্রিক টন ও এরপর ৪ বছর ৫ লাখ মেট্রিক টন, অবশিষ্ট ৫ বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন তেল সরবরাহ করবে। এরপর চুক্তি নবায়ন নবায়ন করা হবে। না হলে পাইপলাইনের মালিকানা বাংলাদেশের কাছে থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তজার্তিক বাজার থেকে তেল আনতে প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস পড়ে ১১ ডলার। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে খরচ পড়বে ৫ দশমিক ৫০ ডলার। অথ্যাৎ প্রায় ৬ ডলারের মত প্রিমিয়াম সাশ্রয় হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে বড়বড় জাহাজে তেল চট্রগ্রাম বহিনোঙরে আসে। সেখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে খুলনা দৌলতপুরে আসে। তারপর ব্রডগেজ লাইনে আনা হয় পার্বতীপুর ডিপোতে। সরাসরি আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন দিয়ে এসব ঝামেলা ছাড়াই তেল নেওয়া যাবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, ভারত সরকার এই পাইপলাইনের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছেন। আমরা পাইপলাইনের জন্য ভূমি বরাদ্দ ও রিসিভ ট্যাংক নির্মান করেছি। পার্বতীপুর শহরের অদূরে রেল হেড ডিপোর পাশে ৬ দশমিক ৮০ একর জমিতে রিসিপ্ট টার্মিনালটি (আরটি) নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ করেন মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড এবং ওয়েল ডিপোর কাজ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড। ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সংস্থা নুমালিগড় রিফাইনারী লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।
এখনও শেষ হয়নি প্রকল্পের অন্যতম প্রধান ডিজেল তেল স্টোরেজ নির্মাণ কাজ
এখনও শেষ হয়নি প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাইপলাইনের ডিজেলের অয়েল ট্যাংকার স্টোরেজ নির্মাণ কাজ। অয়েল ডিপো নির্মানে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড। অয়েল ট্যাংকের প্রধান উপকরন ১ হাজার ৩শ’ টন ষ্টিলের পাত বিদেশ থেকে আমদানী হওয়ায় ৫ হাজার ৬শ’ ৯০ মে.টন ধারন ক্ষমতার ৬টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপন কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা দুটি ওয়াটার ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য ২ হাজার ৫শ লিটার ধারন ক্ষমতার দুটি ব্লাডার ট্যাংক ও অটোমোশন সিষ্টেম স্থাপনের কাজ ৮টি ট্যাংক নির্মানের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পাম্প হাউজ, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন ও ২৪টি ট্র্যান্সফর্মার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নির্মাণ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ, সিকিউরিটি পোষ্ট, সিকিউরিট গেট, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। এখানে আগেই তেল মজুদের একটি ডিপো রয়েছে। সেখানে ১৪ হাজার মে.টন তেল সংরক্ষন করা যেত। নতুন করে ২৯ হাজার মে. টন তেল মজুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলে এই ডিপোতে এখন ৪৩ হাজার মে. টন তেল মজুদ করা যাবে। যা দিয়ে উত্তরের ১৬ জেলায় ৬০ দিন চলবে। করোনায় এলসি খুলতে দেরি হওয়ায় ট্যাঙ্কারের স্টিলপাত আমদানীতে বাধাগ্রস্ত হয়। এখনও এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় আর কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ মাস লাগবে প্রকল্পের একটি সুত্র জানান। বিশেষ করে নীলফামারীর সৈয়দপুরস্থ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ¦ালানি চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ¦ালানি তেল (ডিজেল) আমদানীর রিসিভ টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের সকল কার্যক্রম মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই সর্বাধুনিক অটোমোশন পদ্বতিতে পরিচালিত হবে। মেঘনা অয়েল কোম্পনী সুত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের জ¦ালানি তেল চাহিদা পুরনের জন্য সমুদ্রপথে আনা জ¦ালানি তেল চট্রগ্রাম থেকে রেলপথে পার্বতীপুর রেল হেড অয়েল ডিপোতে নিয়ে আসা হয়। এতে সময় লাগে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে জ¦ালানি তেল একদিনের মধ্যে আমদানী করা সম্ভব হবে। সেচ মৌশুমে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় জ¦ালানী তেলের সরবরাহে স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ১৯৯৯ সালে পার্বতীপুরে রেলহেড অয়েল ডিপো স্থাপন করে। এর পাশেই ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন প্রকল্প স্থাপন করা হয়। গত ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন নির্মান কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প সুত্র জানায়, এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দ্ধারিত সময়কাল ছিল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন