রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : বিশ্বে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। এসব পরিস্থিতি থেকে সৃষ্টি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার মধ্যেও মূল্যস্ফীতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। সেজন্য নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রোববার (১৯ মে) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, এবং মহামারি করোনার কারণে সমস্ত কাজ বন্ধ, রপ্তানি বন্ধ, আমদানি বন্ধ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি এবং নানারকম সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও এ ধাক্কাটা এসে পড়েছে। এর সাথে যুক্ত আছে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের যুদ্ধ। বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো আমদানি করতে হয় তার প্রত্যেকটার দাম বেড়েছে। যার একটা প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। এটা শুধু করতে পারব, যখন আমরা নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে পারব। 

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতার লোভে নিজের স্বপ্ন অন্যের হাতে তুলে দেইনি। তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। 

তিনি বলেন, ২০০৯-২৩ এ বাংলাদেশ বদলে গেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। তারই পাশাপাশি শিল্পায়ন করতে হবে। মানুষের উদ্যম কাজে লাগাতে পারলেই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে। এসএমই উদ্যোক্তারা একক বা যৌথভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। নারী-পুরুষকে সমানভাবে উদ্যোক্তা করতে পারলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমি কৃষির ওপর গুরুত্ব দিই, আদালা বাজেট রাখি। সে সময় প্রথম দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। ২০০৯ আবার ক্ষমতায় এসে দেখি দেশ খাদ্য সংকটে। এখানে নীতির ব্যাপারে একটা প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, যেদিন আমি সংসদে বলেছিলাম দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তখন বিরোধী দলের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। তখন আমি উঠে বললাম, কারও কাছে ভিক্ষা করে দেশের মানুষ চলবে না। 

তিনি বলেন, শিল্পকে পরিবেশবান্ধব হতে হবে। যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অল্প খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। 

এ সময় শ্রমঘন শিল্পের মনোযোগ দিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। যেন বেশি মানুষ কাজ পায়। তিনি বলেন, ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেও চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে চাকরি দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। নারীদের আরও উদ্যোক্তা হতে হবে। তাদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ থেকে ২০২১ সালের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করেছি। এরই মধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হবো।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। একসময় এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই বড় হবে। তারা উপকৃত হবে, দেশ উপকৃত হবে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানান পণ্য উৎপাদন হয়। এগুলো দেশের অভ্যন্তরে বাজারজাত করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। নিজের দেশের চাহিদা বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। পাশাপাশি দেশের ভেতরে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। পদ্মার ওপারে বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সেখানে এসএমই উদ্যোক্তারা কাজ করতে পারেন।’ 

 

শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করা, তাদের সুযোগ সুবিধা দেখা, এসব করলে তাদের থেকে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন।’ 

শিল্পের প্রসারে পরিবেশ সুরক্ষার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জলবায়ুর অভিঘাতে যেন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই। শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সামান্য কয়টা টাকা বাঁচাতে গিয়ে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয়। আমরা চাই শিল্প কারখানা গড়ে উঠুক, কিন্তু পরিবেশ নষ্ট না করে।’

 

তিনি বলেন, ‘করোনা মাহমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এখন আবার যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনে ইজরায়েলের হামলা। এসবের ফলে নানান সংকটে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। আমরা সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’ 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি এখানে দেখছি উদ্যোক্তাদের ৬০ ভাগ নারী। এটা দেখে আমি খুব খুশি। কারণ একটা দেশের বড় অংশকে পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। তাদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। উভয়ে সমান তালে এগোলো দেশ এগোবে। পুরুষরাও চাইলে স্ত্রী, মায়ের নামে উদ্যোগ নিয়ে এসএমই ঋণের সুযোগটা নিতে পারেন। কারণ তারা নিজের নামে তো ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন না। নারীদের নামে করলে পাবেন। আমি বলবো, পুরুষরা চাইলে সে সুযোগটা নিতে পারেন। কারণ আমরা চাই, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বাড়ুক।’ 

তিনি বলেন, ‘মানুষের কর্মক্ষমতা ও উদ্যম কাজে লাগাতে পারলে তারা সোনার মানুষ হবে। এরাই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবে। আমরা এরই মধ্যে ১০০টা ইকোনমিক জোন করেছি। শুধু বিদেশি বিনিয়োগ নয়, দেশি বিনিয়োগও চাই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ইকানমিক জোনে জায়গা নিয়ে কাজ করতে পারেন।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি বলে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশের স্বার্থ অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। বিরোধীদলে থাকতে আমাদের পরিকল্পনা করি। সরকারে এসে সেটি বাস্তবায়ন শুরু করি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আজকের বাংলাদেশ কিন্তু বদলে গেছে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্পসহ নানান খাতে ব্যাপক এগিয়েছি। কৃষিতে গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর কোনো সরকার দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেয়নি। বরং পিছিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরির নানান পদক্ষেপ নেই। বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করি। ব্যাংক, বিমা, টেলিকম, এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন খাতে বেসরকারি উদ্যোগের সুযোগ করে দেই। বিদ্যুতেও বেসরকারি খাতকেও সুযোগ দিয়েছি। যাতে উৎপাদন বাড়ে এবং মানুষের কাজের সুযোগ হয়। শুধু উৎপাদন করলে হবে না, এটার সঠিক বাজারজাতকরণেও নজর দেই।’ 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদুর রহমানসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা।

 

বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। 

অনুষ্ঠানে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার- ২০২৩ পেয়েছেন ৭ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কার প্রাপ্তদের নগদ পুরস্কার, ট্রফি ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। 

জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার পেলেন যারা 

  • বর্ষসেরা নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা স্বপ্না রাণী সেন,
  • বর্ষসেরা পুরুষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মো. শাফাত কাদির,
  • বর্ষসেরা পুরুষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া,
  • বর্ষসেরা ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি,
  • বর্ষসেরা পুরুষ মাঝারি উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেন মাসুদ,
  • বর্ষসেরা মাঝারি নারী উদ্যোক্তা সীমা সাহা ও
  • বর্ষসেরা স্টার্ট আপ মদিনা আলী।

সাত দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। শুধু দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি করা পণ্য নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এসএমই ফাউন্ডেশন মেলার আয়োজন করেছে। এতে ৩৫০টির বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেবে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা।
 

 

 

এবিএন/জেডি 

facebook sharing button
twitter sharing button
email sharing button
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন