শনিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

নড়াইলের হাট-বাজারে সয়াবিন তেলের পাশাপাশি সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা

নড়াইলের হাট-বাজারে সয়াবিন তেলের পাশাপাশি সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা

ফরহাদ খান, নড়াইল

নড়াইলে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে বেড়েছে সরিষার চাষাবাদ। গত ব্ছরের তুলনায় এ বছর সরিষার আবাদ বেড়েছে। বাজারের সয়াবিন তেলের দাম উর্ধ্বমুখি হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই বাড়ছে সরিষার তেলের চাষাবাদ। স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকরা সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সরিষার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। এছাড়া প্রতিমণ সরিষা ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। .

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভাধীন ঘোষপাড়ার অপূর্ব কুমার অপু বলেন, সল্পকালীন সময়ের (প্রায় দুই মাস ১০ দিন) ফসল হিসেবে কৃষাণ-কৃষাণীদের মাঝে সরিষার কদর রয়েছে। যুগ যুগ ধরে কৃষকরা সরিষা চাষাবাদ করে আসছেন। তবে ভোজ্য তথা সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধিতে আগের চেয়ে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিলের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন  কাঁচা কিংবা পাকা সড়কের দুই পাশে এবং বসত বাড়ির আশেপাশেও সরিষা আবাদ করেছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সরিষার তেল দিয়ে রান্নার পাশাপাশি আচার, বিভিন্ন রকমের ভর্তা ও গায়ে মাখার ক্ষেত্রে সরিষার তেলের জুড়ি মেলা ভার। এ বছর এক একর ১২ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ঠিকমত ঘরে তুলতে পারলে ১৬ মণ সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। সল্প সময়ের ফসল হিসেবে সরিষাকে অনেকে ‘ফাউ’ বা ‘উদ্বৃত্ত’ ফসল হিসেবে মূল্যায়ন করেন। সরিষার জমিতে একবার করে নিড়ানী, সেচ ও সার দিয়েই হয়ে যায়। এজন্য খুব পরিশ্রম করতে হয় না। নিজেদের উৎপাদিত সরিষার তেলেই আমাদের সারা বছরের রান্না চলে এবং বাড়তি সরিষা বিক্রি করে দিই। এক্ষেত্রে প্রতিমণ সরিষা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। আর সরিষা ঘরে উঠে গেলে এই জমিতেই শুরু হবে বোরো ধান রোপনের কার্যক্রম।

একই এলাকার কৃষক মুক্তার শেখ বলেন, সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। এ বছর শীত মওসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদি। ইতোমধ্যে অনেকে সরিষা ঘরে তুলেছেন। অনেকে তোলার অপেক্ষায় আছেন।

লোহাগড়া উপজেলার সরুশুনা গ্রামের মনির হোসেন বলেন, এ বছর সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। মওসুমের শুরুতে প্রতিমণ সরিষা ৩ হাজার টাকা বিক্রি হলেও পরবর্তীতে দাম বেড়ে তা ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়ে থাকে।

নড়াইল সদর উপজেলার সরসপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি ১২ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি তেলের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সরিষা বিক্রি করতে পারব।

নড়াইলের বৃহত্তম ব্যবসাকেন্দ্র রূপগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী কৃষ্ণপদ বলেন, বাজারে সয়াবিন তেলের পাশাপাশি প্রতিদিনই সরিষার তেল বিক্রি করি। বর্তমানে প্রতিকেজি সরিষার তেল ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেক সময় ২২০ থেকে ২৩০ টাকাও কেজি বিক্রি হয়। আর সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবুও ভোক্তা পর্যায়ে সরিষা তেলের বেশ চাহিদা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার জানান, চলতি মওসুমে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৩৪৮ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে-১৭ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন। এদিকে, গত মওসুমে সরিষা চাষাবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৮৮৮ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে এ বছর ৪৬২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বেশি হয়েছে। #

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন