বনশ্রীর ঠাঁই এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : নব্বইয়ের দশকে ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ঢাকাই সিনেমাতে অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। এরপর একই বছরে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মহা ভূমিকম্প’। সুভাষ ঘোষ পরিচালিত এই সিনেমায় দুই নায়ক মান্না ও আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এরপর সে সময় আরও অনেক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্যি, একসময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকা এখন বেদে পল্লীতে, বাস করেন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। সবাই তাকে বনশ্রী নামে চিনলেও তার পুরো নাম সাহিনা সিকদার। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে তার বাড়ি। বাবা ঠিকাদারি করার কারণে সাত বছর বয়সেই শিবচর থেকে পাড়ি জমান রাজধানীতে। ইট-পাথরের নগরীতে এসে নাম লেখান সিনেমায়, জনপ্রিয়তাও পান। তবে সুখের সময়টা খুব বেশিদিনের ছিল না। গর্ভে সন্তান আসায় বাধ্য হয়ে একটা সময় সিনেমা থেকে সরে যান। এরপর দারিদ্র্যের কবলে পড়ে বাস করেন এক বস্তিতে। কাজবিহীন অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন। একটা সময় নিজের পেট চালানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ফুল, বই বিক্রি করতেন। সর্বশেষ জানা যায়, তিনি শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকেন। গত ৬ নভেম্বর সরেজমিন যাওয়া হয় সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওই গুচ্ছ গ্রামের টি-২৯ নম্বর ঘরে থাকেন বনশ্রী। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে তিনি আরও জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে। বড় মেয়েটি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন কিডন্যাপ হয়েছিল। এরপর মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে একেবারে বৃদ্ধের মতো হয়ে পড়েন। বনশ্রী জানান, তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সঙ্গীতার মালিক সেলিম খান তাকে মডেল বানিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফেরত দেয়নি। মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য থানাপুলিশের আশ্রয় নিয়েও ফেরত পাননি। দেশ রূপান্তরকে বনশ্রী বলেন, মেয়েটির বিষয়ে আমি প্রশাসনের কোনো সাহায্য পাইনি। আমার মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানি না। তিনি আরও বলেন, এখন কষ্ট করেই দিন যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক মিটিংয়ে যাই। ছেলেটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, ওকে সময় দেই। আমি ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করি। তবে করোনাভাইরাস আসার পর আর সেলাইয়ের কাজ পাই না। তবে নিজের জামাকাপড় নিজেই সেলাই করি। বনশ্রীর দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ায় শেখ হাসিনার সরকার। বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন ২০ লাখ টাকা। এতেও অভাব ঘোচেনি বনশ্রীর। স্থায়ী ঘর না থাকায় স্বস্তিতে ছিলেন না। সবশেষে ঠাঁই হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। বনশ্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা আমি ব্যাংকে রেখেছি। সেই টাকার লাভের অংশ দিয়ে আমি চলতাম। আগে সেই টাকায় ২১ হাজার ৪শ টাকা লাভ পেতাম। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকতাম। পরে আনুমানিক ৪ বছর হবে সেই লাভের টাকা থেকে ৪ হাজার ২০ টাকা ব্যাংক কেটে নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে ১৭ হাজার ২শ টাকার মতো ওখান থেকে লাভ পাই। কিন্তু সেই টাকায় নিজের ওষুধ কিনে সংসারের কেনাকাটা করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানো যাচ্ছে না। পরে আমি চলে আসি গ্রামে। এখানে এসে একটি টিনের ঘর ভাড়া নেই। অনেকে আমাকে ঘর ভাড়া দিতে চায়নি। পরে টেলিভিশনে দেখি প্রধানমন্ত্রী মানুষকে ঘর দিচ্ছেন। গুচ্ছগ্রামে ঘর দিচ্ছেন। তখন আমি চিন্তা করলাম আমি ওখানে চলে যাব। এরপর এখানে চলে আসি। এখানে যেই ঘরে থাকি সেটা ঠিক ছোটখাটো একটি ফ্ল্যাটের মতো। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। কারণ এর থেকেও অনেক খারাপ ঘরে থেকেছি আমি। আমার মনে হয় কি জানেন? আমি বিপদে পড়ার পরে আমি ভালো একটি জায়গায় অবস্থান করছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আছি। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি আর এখন নায়িকা নেই। আমার মেয়েটি হারিয়ে গেছে। কোথায় আছে সে, জানি না আমি। শেখ হাসিনার দয়ায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এই বেদে পল্লীতে বেঁচে আছি। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, বনশ্রী একসময় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তিনি ভূমিহীন ক্যাটাগরিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন।