মৌলভীবাজারে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস
মহান ভাষা আন্দোলনে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। জেলা জুড়ে তৎকালীণ ছাত্র জনতা মিছিল, প্রতিবাদসভাসহ বিভিন্ন আন্দোলনে মূখরিত করে রাখেন এ জেলা। আন্দোলন করতে গিয়ে মুসলিমলীগারদের হাতে প্রহারের শিকারও হতে হয়েছে অনেককে।
এ প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পাঁচভাই হোটেলের ফ্যামেলী হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু প্রেক্ষিক শীর্ষক মতবিনিময় সভা।
শনিবার সকাল থেকে দিনব্যাপী এই মতবিনিময় সভায় আয়োজন করে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও গবেষনা কালেকটিভেটি এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিল শ্রীমঙ্গল ম্যাক বাংলাদেশ।
এ সময় বক্তব্যদেন শ্রীমঙ্গলের প্রবীণ ব্যাক্তিত্ব অধ্যাপক সাইয়্যিদ মুজিবুর রহমান, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক কবি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য্য, লেখক ও গবেষক অহমদ সিরাজ, বাংলাদেশ উন্নয়ন ও কালেকটিভেটি এর সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী ফেরদৌসী লাকী, ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইলিয়াস এর পুত্রবধূ কাউন্সিলার শারমীন জাহান, ভাষা সৈনিক মফিজ আলীর ছেলে সাংবাদিক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য্য, টেরাকোটা ক্রিয়েটিভস এর রুম্মান আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বিকুল চক্রবর্তী, ম্যাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এ হামিদ, সাংবাদিক কাওছার ইকবাল ও দ্রæপ্রক এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ভাষা সংগ্রামে কেন্দ্রীয় আন্দোলনে ছিলেন প্রাক্তন এমএনএ মোহাম্মদ ইলিয়াস ও রওসন আরা বাচ্চু। ঢাকায় ভাষা সৈনিক সালাম, জব্বার, রফিক ও বরকতসহ ভাষা সৈনিকদের উপর গুলি চালিয়ে তাদের হত্যার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার জেলায় ও বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়। মিছিলে অংশগ্রহনকারী অনেকের নাম উঠে আসে এই সভায়। সভায় আয়োজক বাংলাদেশ গবেষনা ও উন্নয়ন কালেকটিভেটি এর সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী ফেরদৌসী লাকী বলেন, এই তথ্যগুলো সংগ্রহের প্রয়োজনেই তারা মৌলভীবাজারে এসেছেন।
এ সময় বক্তারা আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনে স্থানীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর যোগসুত্র খোঁজতে গবেষনার প্রয়োজন তবে ভাষা আন্দোলন তৎপরবর্তী সময়ে একাধিকবার বঙ্গবন্ধু এ জেলায় এসেছেন যার অনেক ইতিহাস বিদ্যমান আছে।
উল্লেখ্য মুক্তিযোদ্ধের গৌরব উজ্জ¦ল ইতিহাসের পাশাপাশি মৌলভীবাজার জেলায় ভাষা আন্দোলনেও ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বিভিন্ন লেখকের প্রকাশনা ও প্রবীণ দের কাছ থেকে জানাযায়, ঢাকায় মায়ের ভাষা বাংলাকে রাস্ট্র ভাষা করার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমন করে পাকিস্তানী পুলিশ। এ সময় পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, সফিউরসহ অনেক ছাত্র শহিদ হয়েছেন। এ খবর মৌলভীবাজারে এসে পৌছালে ২২ ফেব্রæয়ারির মৌলভীবাজারে দুটি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। হত্যার প্রতিবাদে তারা মিছিল করে। মিছিল করার অপরাধে শিক্ষার্থী মো. আবদুল গফুর ও মনির মিয়ার উপর হামলা করেন মুসলিমলীগ নেতারা। তবে সে সময় মুসলিমলীগ বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিল-মিটিং অব্যাহত রাখে মাতৃভাষার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
পর দিন ২৩ ফেব্রæয়ারি থেকে আন্দোলন আরো জোড়ালো হয়। এটি জেলা ছাড়িয়ে পৌছায় সকল উপজেলায়। মৌলভীবাজার বালক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ধীরেন দত্ত পোদ্দার, শচীন্দ্র দত্ত, নাজমুল হক চৌধুরী মৌলভী আবদুল আজিজ, মফিজ আলি ও নবম শ্রেণির ছাত্র প্রভাষ করসহ বেশ কয়েকজ শিক্ষার্থী জেলাব্যাপী অনান্য শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ শুরু করেন। তারা কখনও পায়ে হেঁটে কখনও ট্রেন চড়ে কাজ করেন। তারা আন্দোলন জোরাদার করতে বিভিন্ন জনকোলাহল স্থানে পোস্টারিংও করেন। কেউ কেউ সিলেটের সভায়ও যোগ দেন।
২২ ও ২৩ ফেব্রæয়ারি জেলার সব বিদ্যালয়েই ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার পৌরসভার পার্কে মৌলভী আবদুল আজিজ উকিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি জনসভা। যেখানে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও যোগদেন।
পরদিন বর্তমান শ্রীনাথ সরকারী মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে ছাত্রনেতা পীর হাবিবুর রহমান, মো: তারা মিয়া, বসন্ত দাস প্রমুখের উদ্যোগে আরো একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মাঠে ঢাকায় ভাষা সংগ্রামীদের মিছিলে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এক বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর মুসলিমলীগার হয়েও এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন সিলেট জিলা পরিষদ সদস্য এবং শ্রীমঙ্গল থানা মুসলিমলীগের সভাপতি মো. ইছরাইল মিয়া। এ সভায় অন্যতম সংগঠকের ভুমিকা পালন করেন কমিউনিস্ট ও কৃষক আন্দোলনের নেতা ডা: সূর্য্যমণি দেব।
জেলা ব্যাপী এ আন্দোলনে আরো সক্রীয় ভূমিকায় যাদের নাম পাওয়াযায় তাদের মধ্যে রয়েছেন মো. ইউনুছ মিয়া উকিল, কুলাউড়ার সৈয়দ আকমল হোসেন, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সৈয়দ আহমদ মাহমুদ, মো. মাহমুদ হোসেন, আবদুল মঈন চৌধুরী ও সাইফুর রহমান। পাকিস্তানী পুলিশের হুলিয়ায় তৎকালীন ছাত্রনেতা শশাংক ঘোষ আত্মগোপনে থেকেও ভাষা আন্দোলনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা তখন মিছিলে ও প্রতিবাদ সভায় ছিলেন।
এর পর ১৯৬২ সালে শহিদদের স্মরণে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে প্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্