রোজায় কীভাবে আপনার ত্বকের যত্ন নেবেন
মুক্তিনিউজ২৪.কম ডেক্স : রমজান হলো এক মাসের শারীরিক ত্যাগ আর আত্মিক পরিশুদ্ধতার মাস, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে পানাহার থেকে বিরত থাকেন।
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রের যে দুর্ভোগে থাকে সেটি অনুধাবনের একটি সুযোগ করে দেয় এই রোজা।
তবে পর্যাপ্ত পানি পান না করা, ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া ও যথাযথ খাদ্য গ্রহণ না করার একটি প্রভাব পড়তে পারে শরীরে ও ত্বকে।
টিকটক ডার্মাটোলজিস্ট (চর্ম বিশেষজ্ঞ) দ্য ডার্ম ডক্টর, যার অন্য পরিচয় হলো ড. মুনিব শাহ লোকজনকে উৎসাহিত করছেন রোজার মাসে ত্বকের অধিকতর যতœ নেওয়ার জন্য।
‘আমার বড় হওয়ার সময়টিতে আমার খুব বেশি দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম বন্ধু ছিলো না যারা রোজা পালন করতো,’ বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্ককে বলছিলেন তিনি।
‘তবে সামাজিক মাধ্যমের একটি চমৎকার বিষয় হলো আপনি যেখানেই থাকুন না কেন বিশ্বের অনেক লোকজন পাবেন যারা তাদের এসব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে।’
২০২০ সালে টিকটকে প্রথম পোস্ট করার পর থেকে মুনিব শাহর ফলোয়ার এখন পর্যন্ত এক কোটি ৭০ লাখ এবং এই প্লাটফর্মে ডার্মাটোলজিস্টদের মধ্যে তাকেই বেশি অনুসরণ করা হয়।
তিনি ত্বকের যত্নের মিথগুলোকে উন্মোচন করতে এবং এই মাস কীভাবে কিছু লোকের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সেটি প্রকাশ করতে চান।
‘অনেকের ত্বকে সোয়ারিসিস ও ব্রণ আছে এবং কিছু গবেষণা বলছে রোজার সময়ে যারা উপবাস থাকবেন তাদের সোয়ারিসিসের মতো অবস্থা কিছুটা কমতে পারে,’ বলছিলেন তিনি।
রোজায় ত্বকের যত্ন নেয়া নিয়ে মুনিব শাহর কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
হাইড্রেট, হাইড্রেট, হাইড্রেট
পানাহার থেকে বিরত থাকলে ত্বক কিছু ময়েশ্চার হারাতে কিংবা কিছুটা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। সে কারণে পানিশূন্যতা প্রতিরোধী উপাদান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন মুনিব শাহ।
‘দৈনিক পাঁচবার নামাজের সময় ও এর পরে মুখ ধোয়ার কারণে মুখ শুকিয়ে যেতে পারে,’ বলছিলেন তিনি।
‘মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় এটা ত্বকের প্রদাহের কারণ হতে পারে।’
সুষম খাদ্য তালিকা
ড. শাহর ব্যাখ্যা অনুযায়ী কিছু মানুষ অভিযোগ করেন যে রোজার সময় তাদের ত্বকের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। এর কারণ হলো রোজায় তাদের খাদ্য তালিকায় হুট করেই অনেক পরিবর্তন আসে। এর মানে হলো রোজা শেষে ইফতারিতে আপনি কী খাচ্ছেন।
সূর্যাস্তের সময় এবং সূর্যোদয়ের আগে অনেক ভারী খাবার কিংবা খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার না থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ত্বকে।
ড. শাহ অবশ্য লোকজনকে উৎসাহিত করেন, ইফতারিতে সেরকম খাবার খেতে, যেটা তারা পছন্দ করেন, কিন্তু অবশ্যই দেখে শুনে।
‘ভাজা খাবারের সঙ্গে ব্রণের সম্পর্ক নেই। কিন্তু অতিরিক্ত যে কোনো খাবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’
‘আমি ইফতারিতে ভাজা খাবার খেতে পছন্দ করি কিন্তু অনেকেই দেখবেন যে এটা তাদের ত্বকের ক্ষতি করছে।’
সহজ করে দেখুন
রোজার সময়ে খাবার ও ঘুমের প্যাটার্নে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সে কারণে দৈনন্দিন ত্বকের যতেœ রুটিনেও পরিবর্তন আনেন অনেকে।
কিন্তু ড. শাহ বলছেন, রোজাতেও আপনি ত্বকের যত্নে আপনার স্বাভাবিক উপাদানগুলোই ব্যবহার করতে পারেন।
‘এটা কমন ভুল ধারণা যে রোজার সময় নিয়মিত ব্যবহৃত স্কিন কেয়ার উপাদান ব্যবহার করা যায় না,’ বলছিলেন মুনিব শাহ।
‘আমি মনে করি আপনি ক্ল্যাসিক ময়েশ্চার ও সানস্ক্রিন ক্রিম রোজাতেও ব্যবহার করতে পারেন।’
ড. শাহের মতোই কনটেন্ট ক্রিয়েটর ফারাহ ফেরেরোও তার অনুসারীদের জন্য সামাজিক মাধ্যমে ত্বকের যতেœর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
২৯ বছর বয়সী এই তরুণীর বিশ্বাস যে রোজার মাসে কোনটি ব্যবহার করবেন আর কোনটি করবেন না তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক ভুল ধারণা আছে।
‘অনেকে অ্যালকোহল উপাদান আছে এমন কোনো প্রোডাক্ট রোজার সময় ব্যবহার করেন না।’
‘টোনারে অ্যালকোহল থাকে তাই মুসলিম হিসেবে আমি এটি সেবন করছি না এবং এটা আমাকে নেশাগ্রস্তও করছে না। তাই এটা শুধু ত্বকে ব্যবহার করছি।’
ফারাহও বলছে রোজার সময় অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার কথা।
‘দুবার করে পরিষ্কার করা- অর্থাৎ প্রথমে মেকআপ তোলা এরপর আবার লোমকূপের গভীর থেকে পরিষ্কার করা। অনেক সময় খুব অলস লাগলে আমি ওয়াইপ ব্যবহার করি। অনেক সময় সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাই কারণ এটা আসলেই আপনার ত্বকের জন্য ভালো নয়,’ তিনি বলছিলেন।
‘কিন্তু যখন সারাদিনের কাজ থেকে বাসায় এসে রান্না করলাম। তখন আমি সবচেয়ে সহজে যা করা যায় তাই করতে চাই। এটা করাই যায়।’
তথ্যসূত্র : বিবিসি