বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

স্মার্ট দেশ গড়ার সুযোগ চাইতে হাজির হয়েছি : শেখ হাসিনা

স্মার্ট দেশ গড়ার সুযোগ চাইতে হাজির হয়েছি : শেখ হাসিনা

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এই উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবনমান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই।

 

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ভাষণ দিচ্ছেন তিনি।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য হ্রাস, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি ও জীবন জীবিকার স্থায়ী ব্যবস্থা করা, যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের আজকের শিশু এবং তরুণদের সুশিক্ষিত করা, স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করা, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, প্রতি উপজেলায় কারিগরি ও কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের যে সুযোগ সৃষ্টি করেছি তা সম্পন্ন করা, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন কর্মক্ষেত্র খুঁজে বের করা, গ্রামের মানুষের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা, রাস্তাঘাট উন্নত করা, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের যে ব্যবস্থা নিয়েছি- তা টেকসই করে সব মানুষের জীবনমান উন্নত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। আপনাদের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত হয়ে আরেকবার সরকার গঠন করতে পারলে আমাদের গৃহীত কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করে আপনাদের জীবনমান আরও উন্নত করার সুযোগ পাব।

 

শেখ হাসিনা বলেন, নদী, খাল, পুকুর, জলাধার খনন, ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ, বনায়ন সৃষ্টি, উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনি তৈরি করে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদী ভাঙনের হাত থেকে দেশের জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করব। সড়ক, রেল, নৌ, বিমান পথ ও সেবা উন্নত করে যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে।

 

তিনি বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, অধিক ফসল উৎপাদন, খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্য ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা, দেশের চাহিদা পূরণ করা ও বিদেশে রফতানির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার কাজ অব্যাহত থাকবে। রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে নতুন বাজার খুঁজে বের করা, উপযুক্ত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, ওষুধ, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারী শিল্প উৎপাদন, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ রিসাইক্লিনিং শিল্প এবং কারখানা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, এই লক্ষ্যে কৃষিপণ্য, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, পরমাণু গবেষণা, এ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন গবেষণা, সমুদ্র গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণার জন্য ইন্সটিটিউশন ও গবেষণাগার তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই- এ ৫ বছর পূর্ণ করে ২৬ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত আবারও ক্ষমতায় আসে। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেওয়া হয়। ‘হাওয়া ভবন’ খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুঃশাসন।

 

 

তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং পাঁচ শতাধিক মানুষকে আহত করে। জেলায় জেলায় বোমা হামলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশন জট, ছাত্রছাত্রীদের অনিশ্চিত জীবন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার সাধারণ চালচিত্র। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ, হাওয়া ভবনের দ্বৈত শাসনে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে থাকে। নির্বাচনে কারচুপির উদ্দেশ্যে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসমেত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে অন্ধকারের পথে ধাবিত করে। যার ফলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়।

 

শেখ হাসিনা বলেন, এরপর সামরিক বাহিনী অন্তরালে থেকে ক্ষমতা দখল করে। ইয়াজুদ্দীন, ফখরুদ্দীন, মঈনুদ্দীনের এই সরকার জনগণের অধিকার হরণ করে তাদের ওপর স্টিমরোলার চালানো শুরু করে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়। আমাকে এবং আমার দলের বহু নেতাকর্মীসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের বন্দি করা হয়। ভিন্ন দল গঠন করার চেষ্টা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তাদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সচেতন দেশবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায়। জনগণের আন্দোলনের মুখে তারা ৯ম সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। তবে নির্বাচন সংস্কারের যে দাবি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট উপস্থাপন করেছিল সেগুলো থেকে তারা কিছু বিষয় কার্যকর করে। যেমন, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট বাতিল এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে বিজয়ী হয়। আর বিএনপি এককভাবে মাত্র ৩০টি আসনে জয়ী হয়। বাকি আসনগুলো উভয় জোটের শরিকেরা পায়।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছরে বাংলাদেশের অর্থ-সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কতটুকু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে আমি সেই চিত্রটা তুলে ধরছি-

 

প্রবৃদ্ধি ৭.২৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। বাজেটের আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৩ গুণ বৃদ্ধি। জিডিপির আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক রেমিট্যান্স ৬ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক বিনিয়োগ এফডিআই ৫ গুণ বৃদ্ধি। একজন কৃষি-শ্রমিকের ক্রয় ক্ষমতা ৩ গুণ বৃদ্ধি। শ্রমিকদের মজুরি ৯ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫১ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে হ্রাস। অতি দারিদ্র্য হার ৫ গুণ কমেছে। সুপেয় পানি ৫৫ শতাংশ থেকে ৯৮.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ৪৩.২৮ শতাংশ থেকে ৯৭.৩২ শতাংশ বৃদ্ধি। শিশু মৃত্যুহার হাজারে ৮৪ থেকে কমে ২১ জন। মাতৃ মৃত্যুহার প্রতি লাখে ৩৬০ জন থেকে কমে ১৫৬ জন। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২.৮ বছর।

 

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮ গুণ বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগের হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি। স্বাক্ষরতার হার ৭৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কারিগরি শিক্ষা ২২ গুণ বৃদ্ধি। দানাদার শস্য উৎপাদন ৪ গুণ বৃদ্ধি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ঢাকায় মেট্রোরেল চালু করেছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, পাতাল রেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছি। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছি। উদ্বোধন করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণ করেছি। কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন স্থাপন করে ঢাকা-কক্সবাজার রেল রুট চালু করেছি। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

 

অর্থনীতির যে কোনো সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে উৎকর্ষতা সাধন হয়েছে। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৭ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ২২ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ ছিল; যা মোট ঋণের ১০.৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ; যা মোট প্রদত্ত ঋণের ৯.৯ শতাংশ। যারা সমালোচনা করেন- দুঃখের বিষয় যে, তারা সঠিক তথ্যটা জাতির সামনে তুলে ধরেন না। দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা তাদের চরিত্র। মনে হয়, বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি দেখলে তারা বিমর্ষ হয়ে পড়ে।

 

 

 

 

 

 

এবিএন/জেডি

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন