রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

মহা ধুমধামে বট-পাঁকুড়ের বিয়ে, ৫ হাজার অতিথি আপ্যায়ন

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : রং-বেরঙের বাতিতে ঝকঝক করছে মন্দির অঙ্গণ। বিভিন্ন রঙিন কাপড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সুসজ্জিত দুটি গেট। সাজসজ্জা ও আলপোনা এঁকে প্রস্তুত করা হয়েছে ছাদনাতলা ও মাড়োয়া। আর এই ব্যাপক আয়োজন ছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে। তবে এই বিয়ে কোনো মানুষের নয়, বট আর পাকুড় গাছের বিয়ে দিতেই এতো জাকজমকপূর্ণ আয়োজন।

গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) গায়ে হলুদ শেষে আজ বুধবার মহা ধুমধামে হয়ে গেল বট ও পাঁকুড় গাছের বিয়ে। বিয়ে পড়ান ৪ জন পুরোহিত। অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে আমন্ত্রণও জানানো হয় বিয়েতে। আর এই বিয়েতে বর- কনে দুই পক্ষ মিলে অতিথি ছিল প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও গত দুই দিনে হাজারো দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখরিত ছিল বিয়ের স্থল। অতিথি আপ্যায়নে ছিল নিরামিষ খাবার।

দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টি শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গনে বট ও পাঁকুড়গাছের মধ্যে এ বিয়ের আয়োজন করে এলাকাবাসী ও ভক্তরা।

মহা ধুমধামে বট-পাঁকুড়ের বিয়ে, ৫ হাজার অতিথি আপ্যায়ন

আয়োজকরা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করার বিশ্বাস থেকে বট-পাকুড়ের বিয়ে। অর্থাৎ অশ্বত্থাদিবৃ বটেশ্বরি-পাকুড়েশ্বর প্রতিষ্ঠা করা।

অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ি- মঙ্গলবার গায়ে হলুদ শেষে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় অধিবাস, সকাল ১০ টায় নারায়ন পুজা, দুপুর দেড় টায় মধ্যাহ্ন প্রসাদ বিতরন। এরপর দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিয়ে ও যজ্ঞানুষ্ঠান শেষ হয়। এছাড়াও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত পরিবেশিত হবে কবি গান। কবিগান পরিবেশন করবেন চিরিরবন্দর উপজেলার বাবুল সরকার ও খানসামর চন্দনা রানী সরকার।

আয়োজকরা জানান, সমঙ্গলবার সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বর বেশে: পাকুড়গাছ, পিতা: দিলীপ ঘোষ, মাতা: দিপ্তী ঘোষ, ঠিকানা: চকবাজার, সদর, দিনাজপুর। আর কনে সেজে: কুমারী বটগাছ, পিতা: মুন্না সাহা, মাতা: পুর্নিমা সাহা, ঠিকানা: চকবাজার, সদর, দিনাজপুর পরিচয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বরের পিতা আয়োজক দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রকৃতির মঙ্গলের জন্য বট ও পাকুড়গাছের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সনাতন রীতি অনুযায়ী যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সেভাবে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলো। এতে আপ্যায়ন খরচ ধরা হয়েছিল ৩ লাখ টাকা, যা ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৫ হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়েছে।

কনের পিতা মুন্না সাহা বলেন, বটগাছ মেয়ে। আমি মেয়ের বাবা। ছেলে পাকুড় গাছের মা দিপ্তী ঘোষ আমরা প্রতিবেশী। বিয়ে ঘিরে আমরা আনন্দ-উল্লাস করছি।

মহা ধুমধামে বট-পাঁকুড়ের বিয়ে, ৫ হাজার অতিথি আপ্যায়ন

গাছের বিয়ের ব্যাপারে দিনাজপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ বলেন, প্রকৃতি ও ব্যক্তির মঙ্গল কামনায় বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়। বাসুনিয়াপট্টি দুর্গা মন্দিরে চকবাজার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ প্রকৃতির মঙ্গল কামনায় এমন বিয়ের আয়োজন করে। বিয়ে ঘিরে দুই দিন ধরে ছিল ব্যাপক আনন্দ-উৎসব।

পুরহিত বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, লোকাচার মেনে সনাতন রীতি অনুযায়ী ছেলে মেয়েদের যেভাবে বিয়ে হয় সেভাবেই বট-পাঁকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলো । এটিকে বিয়ে বললেও আসলে এটি হলো বট-পাঁকুরড়কে এক সঙ্গে স্থাপন করা। কারণ বট-পাঁকুড় কোনো সময় এক সঙ্গে জন্মায় না।

এদিকে জাকজমকপূর্ণ ব্যাতিক্রমী এই বিয়ে দেখতে আশপাশের লোকজনসহ হাজারো মানুষ ভিড় জমায় ।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন